ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক

বেপরোয়া যান চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা

আশরাফ উদ্দীন, কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম

সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। একসময় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের নিরাপদ পথ হিসেবে পরিচিত এই মহাসড়কটি এখন আতঙ্কের অন্য নাম। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, কখনো ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, কখনো ট্রাক্টর বা সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ, অটো বা মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব ধরনের যানবাহনের সংঘর্ষ প্রায়ই ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, প্রাণও হারাচ্ছেন পথচারী ও যাত্রীরা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের হাতে অটো গাড়ির স্টিয়ারিং। স্কুলে ও মাদ্রাসায় না গিয়ে এই শিশুরা দিনভর যাত্রী বহন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অভিভাবকরা পরিবার চালাতে বাধ্য হয়ে ছোট সন্তানদের অটো চালাতে দিচ্ছেন, কিন্তু এতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

এই অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রায়ই রাস্তার মোড়ে, বাজার এলাকায় কিংবা স্কুলগেটের সামনে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। পথচারীদের অভিযোগ, এসব শিশুচালক মোবাইলে গান শুনতে শুনতে বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালায়।

স্থানীয়দের ভাষায়, যে বয়সে তাদের স্কুলে থাকার কথা ছিল, কিন্তু এখন তারা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই মহাসড়কে প্রতিদিন শত শত ট্রাক, ডাম্পার, বাস, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু অধিকাংশ চালকই অদক্ষ, অনেকে আবার লাইসেন্সবিহীন। প্রশিক্ষণ ছাড়া, অভিজ্ঞতা ছাড়া চালকরা ভারী যানবাহন চালিয়ে পুরো রাস্তা দখল করে দ্রুতগতিতে চলাচল করছেন। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

চালকদের মধ্যে অনেকেই রাতের বেলা অতিরিক্ত সময় ধরে গাড়ি চালান, ফলে ক্লান্তি ও তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অন্যদকে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনেক চালকই মাদক বা ইয়াবার প্রভাবে গাড়ি চালান। এতে তারা দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে এবং হঠাৎ করেই গাড়ি সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো এখন মহাসড়কের নিত্যচিত্র। কেউ কথা বলে, কেউ গান শোনে বা ভিডিও দেখে। এতে মনোযোগ হারিয়ে ঘঠছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ ছাড়া ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা, গতি সীমা না মানা, রাস্তার মোড়ে হর্ন না দেওয়া, সিগন্যাল অমান্য করাসহ অসংখ্য অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে রাস্তার দুই পাশে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়িগুলো পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায় সব সময়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি খুবই সীমিত, টহল কার্যক্রমও অনিয়মিত।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকদের কেউ মোবাইলে কথা বলে, কেউ আবার নেশা করে গাড়ি চালায়। আমাদের এলাকাটা এখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।

বাজার ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় চালকেরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালায়। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন স্থানে স্পিডব্রেকার দিলেও অল্পদিনেই সেটি নিমেষে শেষ হয়ে যায়।