মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার দুটি ইউনিয়নের চারটি গ্রামসহ ঐতিহ্যবাহী রামগতি বাজার মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে রামগতি-মালিবাড়ি-বিবিরহাট সড়কের অন্তত ৬০ গজ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে পুরো সড়ক ধসে পড়ে জেলা সদরের সঙ্গে রামগতির যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, বারবার অভিযোগ জানানো হলেও শুধু জিওব্যাগ ফেলে দায়সারা কাজ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নতুন করে কোনোকিছু না করলে চলতি বর্ষা মৌসুম পার করা কঠিন হবে।
রামগতি উপজেলার বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর, বড়খেরী, আসলপাড়া ও বিবিরহাট, এই চারটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার এখন ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বছরের পর বছর ভাঙন চললেও টেকসই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এবার তো জিওব্যাগেও কিছু হবে না। ভাঙনের ভয় আমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।’
দোকানি সিরাজ মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তার সামনে আমার দোকান। নদী একেবারে গিলে খেতে এসেছে। সরকার যদি এখনই বাঁধ না দেয়, তাহলে আর কিছুই থাকবে না।’
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এক সময় তিন মাইল দূরে থাকা মেঘনা নদী এখন এসে দাঁড়িয়েছে ঘরের দরজায়। প্রতিদিনই হারাচ্ছে ফসলি জমি, বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সড়ক। তিনি বলেন, ‘রামগতি বাজার, থানা, হাসপাতালসহ সবকিছুই হুমকির মুখে। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বড় বিপর্যয় হবে।’
নদীভাঙনে দুইবার বসতভিটা হারানো স্থানীয় নারী রুবিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এবার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। নদী যেন গিলে খেতে এসেছে সবকিছু। গরিবের জীবন কি কেউ দেখে?’
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বেশকিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ‘মালিবাড়ি মোড়ে ভাঙন পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, ‘টেন্ডার হবে, বর্ষা যাবে, এই আশ্বাসে আর বাঁচা সম্ভব না। নদী থেমে নেই, প্রতিদিনই গিলে ফেলছে আমাদের জীবন।’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি উঠেছে সর্বত্র।