মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়ায় অবস্থিত শতবর্ষী পুরোনো ঐতিহাসিক বালিয়াটি জমিদার বাড়ির সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভবনটির সংস্কারের জন্য ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে কাজের মান ও নিয়মনীতি নিয়ে স্থানীয়দের রয়েছে নানা প্রশ্ন ও অসন্তোষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জমিদার বাড়ির একটি দুতলা ভবনে ছাদ মেরামতের কাজ চলছে গত তিন মাস ধরে, যা এখনো শেষ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী উচ্চমানের এক নম্বর ইটের সুরকি ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে নি¤œমানের সুরকি। এমনকি পাথুরে চুনা ভিজিয়ে কাজ করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। শ্রমিকরা নিজেদের মতো করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাসাদের পাঁচটি কক্ষে রঙের কাজ চলছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের রং ও উপকরণ। রংমিস্ত্রীরা জানান, এখন পর্যন্ত পাঁচটি রুমে রঙের কাজ হয়েছে এবং রং বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।
প্রাসাদের সিঁড়িগুলোর অবস্থা করুণ হলেও কেবল একটি সিঁড়ির ধাপে কাঠ পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকি সিঁড়িগুলোর ফাটল ও দুর্বল অবস্থা থেকে গেছে আগের মতোই। সিঁড়ির পাশে দেয়ালের সংযোগস্থলে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
এদিকে চারটি নতুন টয়লেট নির্মাণে খরচ দেখানো হচ্ছে প্রতিটি বাথরুমে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। নাটোরের স্যানিটারি মিস্ত্রি সুরুজ মিয়া জানান, প্রতিটি বাথরুমে টাইলস, স্যানিটারি সরঞ্জাম ও আনুষঙ্গিক খরচসহ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ছাদে ঠিকমতো কাজ করতে গেলে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে ৫ লাখ টাকায় ঢালাই করা হচ্ছে। ফলে পানি পড়ার সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না।
সংস্কারকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএস কনস্ট্রাকশনের পরামর্শদাতা ফিরোজ দাবি করেন, ‘আমি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা। অভিজ্ঞতা থেকে কাজ দেখভাল করছি। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। কিছু শ্রমিক না বুঝেই মন্তব্য করেছেন।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টডিয়ান নিয়াজ মাখদুম বলেন, ‘আমি সঠিকভাবে জানি না কত বরাদ্দ এসেছে। ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম বরাদ্দ এসেছে। তিন মাস ধরে কাজ চলছে। মাঝেমধ্যে কাজ বন্ধ ছিল।’
প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘যদি অনিয়ম হয়, তাহলে ঠিকাদারকে দিয়ে পুনরায় সংস্কার করানো হবে।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে, নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কাজ পরিচালনা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ঐতিহাসিক এই ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
সাঁটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :