কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে উপজেলায় বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫ জন। এসব মৃত্যুর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার অভাব। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সর্বশেষ ২২ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেলে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মধ্য গোবিন্দপুর গ্রামে বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে মারা যান মো. সুনু মিয়ার ছেলে মো. কাউছার (২৫)। বাড়ির পাশে একটি গর্তে মাছ ধরার জন্য বৈদ্যুতিক মোটর চালু করতে গিয়ে তিনি বিদ্যুতায়িত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে ১৯ জুলাই (শনিবার) পুমদি ইউনিয়নের লাখুহাটি গ্রামে নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে মারা যান মো. হবু মিয়ার ছেলে রাজন মিয়া (৩১)। অসাবধানতাবশত বিদ্যুতের তারে হাত লাগলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
৩০ ও ৩১ মে এই দুই দিনে প্রাণ হারান দুই নারী। ৩১ মে সকালে উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের শামসুন্নাহার (৪৫) চার্জে থাকা অটোরিকশায় হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার আগের দিন একইভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান কনা আক্তার নামের আরেক নারী।
এ ছাড়া, ১৬ এপ্রিল সিদলা ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ গ্রামে বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে মারা যান মৃত ছমির উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম আন্নাছ (৩৪) নামের এক ভেটেনারি চিকিৎসক। গরুর দুধ দোহনের সময় বৈদ্যুতিক মেশিনের লিকেজ লাইনে স্পর্শ হন তিনি।
এ বিষয়ে হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক মশিউর রহমান বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। অনেকেই লাইসেন্সবিহীন লোক দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিচ্ছেন। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আগে কিংবা বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করার আগে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল প্রতিটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, ক্যাম্পেইন ও লিফলেট বিতরণের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়াও মানহীন বৈদ্যুতিক পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির হোসেনপুর জোনের ডিজিএম সোহেল রানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎস্পর্শে নিহতের খবর আমাদের জানা নেই। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালালেও অনেকেই তা মানছেন না। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যেককে অবশ্যই বৈধ ও নিরাপদ উপায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। এবার ইউনিয়ন পর্যায়ে তারা গুরুত্বসহকারে বিদ্যুৎস্পর্শ বিষয় ও সর্তকতা নিয়ে প্রচারণা করবেন বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :