ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

‘মুই এলা কেংকরে চলিম, কী খাম’ ইলিয়াস আলী,

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:০৩ এএম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের বাড়ি গ্রামে নেমে এসেছে এক মৃত্যুর বিষণœতা। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে স্বামী-সন্তান হারিয়ে একমাত্র মেয়ে সন্তানকে নিয়ে চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘মুই এলা কেংকরে চলিম, কী খাম, ছুটু বেটিরক কী খিলাম, আল্লাহ কেনে মোর সব কাড়ে নিল!’

মনোয়ারা বেগমের সংসার চলত ছেলে মুন্না হোসেনের রাজমিস্ত্রির কাজের আয়ে। দুই মাস আগে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মুন্না গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। ছেলের শোক সামাল দেওয়ার আগেই গত শুক্রবার রাতে তার স্বামী নুর ইসলামও সেই একই পথে পা বাড়ান, সন্তান হারানোর বেদনায় তিনিও আত্মহনন করেন। গত শনিবার বিকেলে দাফন করা হয় নুর ইসলামকে।

পরিবারে এখন মনোয়ারা বেগম ও তার ১০ বছরের মেয়ে মুন্নি ছাড়া আর কেউ নেই। নেই আয়ের কোনো উৎস। নেই খাবার বা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। বসতভিটা ছাড়া সম্বল বলতে ছেলের রেখে যাওয়া একটি ছোট গরু। মুন্নি বলছিল, ‘ভাইয়া দিনে ৫ টাকা দিত মাদ্রাসায় যাইতে। এখন কেও কিছু দেয় না। আব্বুও নাই। মাও কাঁদে আর চুপচাপ থাকে।’
প্রতিবেশীরা জানান, মনোয়ারার পরিবার ছিল সহজ-সরল। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে নুর ইসলাম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বাধ্য হয়েই সহায়তা চেয়েছিলেন পাড়াপড়শিদের কাছে। কিন্তু ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগেই গলায় দড়ি দেন।

মনোয়ারা বেগমের ভাই সাদ্দাম হোসেন জানালেন, ‘আমার নিজেরই সংসার চলে না। ঢাকায় কাজ করে কোনোমতে দিন চলে। বোনকে সাহায্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই।’

বাড়ি গ্রামের প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন প্রতিবেশীরা মিলেই কিছু খেতে দিচ্ছে মা-মেয়েকে। কিন্তু তা তো স্থায়ী সমাধান নয়। পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। কোনো মানবিক মানুষ এগিয়ে এলে তারা হয়তো বেঁচে থাকবে।’

ঘটনা সম্পর্কে জানালে সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব, আমরা সহযোগিতা করব।’