জনবল সংকটে রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনের ১৪টি স্টেশন বহু বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। কিছু স্টেশনে টিকিট বিক্রি হলেও কিছু স্টেশনে সে সুযোগও নেই। এতে করে টিকিট কাটার সুযোগ না থাকায় এবং পর্যাপ্ত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) না থাকায় যাত্রীদের সম্পূর্ণ নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এদিকে স্টেশন বন্ধ থাকায় ক্রসিং সুবিধা না পেয়ে ট্রেনগুলোকে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সামনে অথবা পেছনের স্টেশনে ট্রেনগুলোকে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। যে কারণে নির্ধারিত সময়ের থেকে কখনো এক ঘণ্টা কখনো দুই ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছায় ট্রেনগুলো।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট, রাজবাড়ী-পোড়াদহ, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে প্রতিদিন সাটল ও রাজবাড়ী এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে বেসরকারি নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস মেইল ট্রেন, রাজশাহী-ঢাকা আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস, বেনাপোল-ঢাকা আন্তঃনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস, খুলনা-ঢাকা আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে চলাচল করে।
জনবল সংকটের কারণে ৫ বছরেরও বেশি ধরে রাজবাড়ী রেলওয়ে জোনের সূর্যনগর, বেলগাছি, মাছপাড়া, গোয়ালন্দ বাজার, খানখানাপুর, বসন্তপুর, বাখুন্ডা, তালমা, পুকুরিয়া, রামদিয়া, বহরপুর, নলিয়া জামালপুর, সাতৈর, ভাটিয়াপাড়া স্টেশনগুলোতে মাস্টার নেই। এগুলোর মধ্যে সূর্যনগর, মাছপাড়া, বেলগাছি, গোয়ালন্দ বাজার, বসন্তপুর, বাখুন্ডা, রামদিয়া স্টেশনে টিকিট বিক্রিরও ব্যবস্থা নেই। আন্তঃনগর ছাড়া অন্য সব ট্রেন এসব স্টেশনে থামছে এবং যাত্রী ওঠ-নামা করছে। তবে স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সুবিধামতো ট্রেনের ক্রসিং দেওয়া হচ্ছে না।
স্টেশন সূত্রে জানা যায, রাজবাড়ীতে প্রায় একই সময়ে তিনটি ট্রেন এসে দাঁড়াচ্ছে। ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী এসে পৌঁছানোর কথা বেলা ১১টায় এবং ছেড়ে যাওয়ার কথা ১১টা ১১ মিনিটে। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনের রাজবাড়ী আসার কথা ১০টা ৫০ মিনিটে এবং ছাড়ার কথা ১১টা ৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সাড়ে ১০টায় পৌঁছে ১০টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা।
এখানে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস দুটিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে ভাটিয়াপাড়াগামী রাজবাড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে কখনো ফরিদপুর, কখনো পাঁচুরিয়া আবার কখনো রাজবাড়ীতে বসিয়ে রেখে পার করা হয় আন্তঃনগর ট্রেন। ফলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা ট্রেনের ভেতরে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। একই অবস্থা ঘটে বিকেলেও। পোড়াদহগামী সাটল ট্রেনের ৪টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ দিনেই তা হয় না। ঢাকাগামী বেনাপোল সাড়ে ৫টায় এসে ছাড়ে ৫টা ৫০ মিনিটে, রাজশাহীগামী মধুমতি ট্রেন পৌনে ৬টায় এসে ৬টা ৫ মিনিটে ছাড়ে। অন্যদিকে ভাটিয়াপাড়া থেকে ভাঙ্গাগামী রাজবাড়ী এক্সপ্রেস ৬টায় এসে ৬টা ১০ মিনিটে ছাড়ে যায়। এখানেও সুবিধামতো স্টেশনে ক্রসিং করতে না পারার কারণে লোকাল ট্রেন দুটিকে অপেক্ষা করতে হয়।
অপরদিকে কিছু স্টেশনে টিকিট কাটার সুযোগ না থাকায় বিনা ভাড়ায় অনেকেই রেল ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। একটি ট্রেনে কখনো একজন কখনো দুজন টিকিট থাকেন। যাদের পক্ষে পুরো ৫টি বগির সব যাত্রীকে নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কখনো যাত্রীরা টাকা দিয়েও টিকিট পান না। কারণ, ৯০ টাকার নিচে কাগজের টিকিট দেওয়া যায় না।
সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছি রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের সময়সূচির কোনো বোর্ড নেই। কক্ষগুলো বন্ধ। প্ল্যাটফর্মের সামনে তিনটি রেললাইন। দুটির ওপর দিয়ে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। প্লাটফর্মের পূর্বদিকে জন্মেছে অনেক আগাছা। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন খানগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও দুই নারী। তাদের একজন কুলসুম বেগম জানান, তারা পাঁচুরিয়া যাবেন। সেই কখন থেকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্টেশনে বসার কোনো জায়গা নেই। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পা লেগে গেছে। এজন্য প্ল্যাটফর্মেই বসে পড়েছেন। ট্রেন কখন আসবে জানার কোনো উপায় নেই। তবে, এ সময়টাতে ট্রেন রাজবাড়ীর দিকে যায় এটা তিনি জানেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, লোকবল সংকটের কারণে রাজবাড়ী জোনের বেশিরভাগ স্টেশনে মাস্টার নেই। মাস্টার না থাকার কারণে তাদের সুবিধা মতো ক্রসিং দিতে পারেন না। রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত শুধুমাত্র পাঁচুরিয়া ও ফরিদপুরে ক্রসিং দেওয়ার সুযোগ আছে। রাজবাড়ী থেকে মাছপাড়া পর্যন্ত পাংশা ও কালুখালীতে ক্রসিং দেওয়া যায়। যদি সবগুলো স্টেশনে মাস্টার থাকতেন তাহলে সুবিধামত ক্রসিং দিতে পারতেন।
রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা হাসিনা খাতুন বলেন, রেলওয়েতে জনবলের সংকট চলছে। যে কারণে কিছু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জনবল নিয়োগের ব্যাপারটি তাদের হাতে নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে এ সংকট কেটে যাবে।