নারায়ণগঞ্জ শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খ্যাত একটি শহর। অথচ এ সিটি করপোরেশনের লাগোয়া বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে রয়েছে একটি অবহেলিত জনপদ চরধলেশ্বরী। চারদিক নদী বেষ্টিত এ গ্রামের সঙ্গে নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। গ্রামের মানুষজনের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা। পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরীর মোহনা এভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রামটির জন্ম কয়েক দশক আগে। ধীরে ধীরে জেগে ওঠা চরটি মানুষের বসতিতে পরিণত হয়। স্থানীয়রা জানান, জায়গার মালিকানা নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে সড়কের জন্য আকুতি।
গ্রামের যুবক রহমত মিয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় নৌকা চলে, কিন্তু রাতে মাঝিকে ডেকে আনা কষ্টকর। অসুস্থ কেউ হলে প্রথমে মাঝিকে রাজি করাতে হয়, তারপর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যায়। একটি রাস্তার জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করব?’
শিক্ষকদেরও একই দুর্ভোগ। চরধলেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে আসি। ঝড়-বৃষ্টিতে এ যাত্রা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।’ তার মতে, সড়ক না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
গ্রামটির আয়তন ১৫ দশমিক ৪৬ একর। বন্দর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা আক্তার ইতি জানান, এ জায়গা মূলত নদী শ্রেণিভুক্ত। যদিও বেদে সম্প্রদায়কে এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে স্থানীয়দের জমির মালিকানা এখনো নিশ্চিত হয়নি। কৃষক আহাম্মদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘বছরের পর বছর আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু মালিকানা পাইনি।’
গ্রামবাসীর দাবি, রাজনৈতিক নেতারা প্রতিবার সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আমির মিয়া জানান, ‘গত সরকারের সময় এমপি সাহেব বলেছিলেন নিট পল্লি করবেন, কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি।’ সড়ক না থাকায় নিরাপত্তা সংকটও বাড়ছে। স্থানীয়রা জানান, গত ঈদুল আজহার সময়ে নদীপথে এসে ডাকাতরা গ্রাম থেকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১২টি গরু লুট করে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামটির প্রায় প্রতিটি ঘরে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করা হয়। প্রাকৃতিক ঘাস ও পানির সহজলভ্যতার কারণে পশুপালন এখানে লাভজনক। বাড়ির সামনে খালি জায়গায় নানা ফসল ও খাদ্যশস্য উৎপাদন করেন গ্রামবাসী। কেউ কেউ নদী পার হয়ে শহরে শ্রম দেন, আবার অনেকে প্রবাসে গিয়ে পরিবার চালান।
চরধলেশ্বরীর পাশেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শান্তিনগর এলাকা। দুই অঞ্চলের মধ্যে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণকাজ আগের সরকার আমলে শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শান্তিনগরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রথমে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হবে। বর্ষা মৌসুম শেষে কাজ শুরু হবে।’
সবুজে ঘেরা নদীবেষ্টিত চরধলেশ্বরী আজও আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন। গ্রামবাসীর চাওয়া একটাই যত দ্রুত সম্ভব একটি সড়ক বা সেতু নির্মাণ করা হোক। তাহলেই হয়তো বদলে যাবে এ সড়কবিহীন জনপদের জীবনচিত্র।