- বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, পারিবারিক সহিংসতা ও অপরাধ
- গেল ৬ মাসে ধরা পড়েছে শতাধিক ব্যবসায়ী, উদ্ধার হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি ইয়াবা
- রাজনৈতিক মদদ ও আইনের ফাঁকফোকরে মূল হোতারা
লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই মাদকের ভয়াবহ বিস্তার সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মাদকের ব্যবহার ও বিক্রির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে হত্যাকা-, পারিবারিক সহিংসতা, কিশোর গ্যাং সক্রিয়তা ও নানা ধরনের অপরাধ।
গত কয়েক মাসে জেলায় সংঘটিত নৃশংস কিছু ঘটনার মধ্যে রয়েছে, ৬ অক্টোবর সদর উপজেলার দক্ষিণ আন্ধারমানিক গ্রামে মাদকাসক্ত ফারুক হোসেনের দায়ের কোপে মারা যায় তার ৫ বছরের শিশুকন্যা ফারিহা সুলতানা। ১১ জুন রায়পুরে মাদক কারবারে প্রতিবাদ করায় বৃদ্ধ আলী দেওয়ানকে কুপিয়ে হত্যা করে তার মাদকাসক্ত ছেলে মামুন। ১ জুন সদর উপজেলার আজাদ হোসেন বাবলু হত্যাকা-ের সূত্রপাতও মাদক কারবারকেন্দ্রিক বিরোধ থেকে। ১৫ মার্চ শহরের কালু হাজী সড়কে মাদক সেবন শেষে ঘরে ফিরে স্ত্রীকে নির্মম নির্যাতন করে আলমগীর নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া স্কুলপড়ুয়া তরুণদের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারিদের করা মামলার অভিযোগ উঠেছে, যা সমাজে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
গ্রামে ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। তরুণরা সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ছে। নেশার টাকার জন্য তারা পরিবারে নির্যাতন ও ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়ছে। গেল বছরের মাত্র চার মাসে মাদকাসক্তদের হাতে সাতটি হত্যাকা- ঘটে, যার মধ্যে স্ত্রী-সন্তান, মা কিংবা ভাই হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাও রয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে ৮৬৯টি অভিযানে ২৩ হাজার ৫৬৪ পিস ইয়াবা ও ১০৩ কেজি গাঁজাসহ ১৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বিভাগ জানায়, ৮ মাসে ৩২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবু মাদকের মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জেলায় ১২ জন গডফাদার, ২৮ জন পাইকারি ও ৭১ জন খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে তথ্য রয়েছে।
রাজনৈতিক মদদ ও আইনের ফাঁকফোকরে অভিযুক্তদের জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদক কারবার শুরু করার অভিযোগও স্থানীয়দের।
প্রেসক্লাব, জনপ্রতিনিধি ও বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু অভিযান নয়, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এ ভয়াবহতা রোধ সম্ভব নয়। মাদক কারবারিরা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ায় নতুন মানুষও এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি, সামাজিক সচেতনতা ও যৌথ অভিযানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে কার্যকর ফল পেতে সবার সহযোগিতা জরুরি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন