ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

পিরোজপুরে মাল্টা চাষে সফলতা পাচ্ছেন চাষিরা

নাছরুল্লাহ আল-কাফী, পিরোজপুর
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:৫৫ এএম

পিরোজপুরে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে সাফল্য পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাহাড়ে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন সমতল ভূমিতেও মাল্টা চাষ করে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর পিরোজপুর জেলায় প্রায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্য ৬৩ হাজার ১০০ টন। যার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০-৩১ কোটি টাকা।

মাল্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পিরোজপুরে উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানি মাল্টার চেয়েও বেশি। এ ছাড়া মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষিনির্ভর এ জেলায় রয়েছে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। বছরের এ সময়ে সবাই পিরোজপুরের রসালো মাল্টা ফলগুলোর অপেক্ষায় থাকে। সারা দেশে এ মৌসুমি মাল্টার চাহিদার কারণে পিরোজপুরে গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে মাল্টা চাষ। এই অঞ্চলের মাল্টাচাষিরা ভালো লাভ পেয়ে দিন দিন এ চাষের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ বছরও মাল্টার বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছে চাষিরা।

‎কৃষি অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলে পেয়ারা, আমড়ার পাশাপাশি এখন মাল্টা চাষেও বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে। চলতি বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলায়। এ বছর ৬৩ হাজার ১০০ টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখানে চাষ করা হয় বারি মাল্টা-১, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত পয়সা মাল্টা নামে। এ মাল্টা চাষে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি জড়িত। এ বছর তাদের উৎপাদিত মাল্টা প্রায় ৩০-৩১ কোটি টাকা রয়েছে আয়ের সম্ভাবনা।

একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত মাল্টা। পিরোজপুরের মাটি প্রধানত এঁটেল, দো-আঁশ এবং বেলে ধরনের, যা কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া মাল্টা চাষে সহায়তা করে। এ কারণে জেলার মাল্টা খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ এ ফল দেখতে আকর্ষণীয় সবুজ এবং খেতে সুস্বাদু। অনেকটা লেবুগাছের মতো গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা মাল্টা শুধু শোভনীয় নয়, বরং স্বাদেও অতুলনীয়।

পিরোজপুর সদর উপজেলা ও ‎নাজিরপুর উপজেলার আব্দুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ও আবু বকরসহ একাধিক কৃষক বলেন, ‘আমরা আগে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতাম। কিন্তু মাল্টা চাষ শুরু করার পর আয় অনেক বেড়েছে। খরচ কম, বাজারে চাহিদা বেশি। এখন প্রতি মৌসুমে ভালো লাভ করতে পারছি। মাল্টার দাম তুলনামূলক ভালো, আবার ফলনও হচ্ছে প্রচুর। আমাদের এলাকার অনেক পরিবার এখন মাল্টা চাষে যুক্ত হয়েছে। এতে আমাদের সংসারও চলছে সচ্ছলভাবে। সরকার যদি আরও সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা মাল্টা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব।’

শখের বশে মাল্টা চাষের বিষয়ে আব্দুল মালেক নামে আরেক চাষি বলেন, ‘আমার ৫ বিঘা জমির একটি মাল্টা বাগান আছে। প্রতিটি গাছ থেকেই এবার ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর একটি গাছ থেকে ২ থেকে ৩ মণের বেশি মাল্টা পাওয়া যায়নি। একই গাছ থেকে এ বছর ৪ থেকে ৬ মণ মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো পেলেও বাজারে মাল্টার দাম কম হওয়ায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। দাম গত বছরের তুলনায় কম। তবে, ফলন ভালো হওয়ায় দাম নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছি না।’

‎জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘আমাদের এ বছর ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে এবং এর উৎপাদন হয় ৬৩ হাজার ১০০ টন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে, তাদের আর্থিক অবস্থা আগের থেকে ভালো। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণের পক্ষ থেকে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে, এতে সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে মাল্টা সংগ্রহ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও চাষিরা এটি অনুসরণ করে মাল্টা সংগ্রহ করবে, তার আগে কেউ মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবে না। মাল্টা চাষে চাহিদা বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় মাল্টা চাষ অনেক বেড়েছে। এসব কৃষককে আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।’