- দেড় মাসে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, হাট-বাজার ও ফসলি জমি বিলীন
- ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর তীব্র স্রোতে নতুন নতুন এলাকায় বড় ফাটল
- বহু গ্রামে অসংখ্য পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় খুঁজছে অন্যত্র
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ বিভিন্ন নদ-নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত দেড় মাসে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, হাট-বাজার ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। পানি কমার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় মুহূর্তেই ধসে পড়ছে তীরবর্তী জমি ও বসতভিটা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হাজারো নদীপাড়ের মানুষ।
উপজেলার মানচিত্রজুড়ে বিস্তৃত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ফুলকুমার, গঙ্গাধর ও সংকোস নদী। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদী সারা বছরই তীব্র ভাঙনের জন্য পরিচিত। বর্ষায় পানি বৃদ্ধি ও হ্রাসের সময় ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। পুরাতন জনপথ হারিয়ে নতুন জনপদ তৈরি হলেও মানুষজন অসহায় জীবনযাপন করে। কেউ অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়, কেউ বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছে।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারায়ণপুর ইউনিয়নের কন্যামতি, ম-লপাড়া, দক্ষিণ তালপট্টি, উত্তর ও দক্ষিণ পদ্মারচর, বালারহাট ও ঝাউকুটি। নদীতে বিলীন হয়েছে পশ্চিম বালারহাট গ্রাম, পশ্চিম বালারহাট জামে মসজিদ, বালারহাট বাজার জামে মসজিদ, পদ্মারচর জামে মসজিদ, মুন্সিপাড়া নূরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা, বালারহাট ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, ম-লপাড়া জামে মসজিদ ও পদ্মারচর পাগলার বাজার। ভেঙে গেছে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি এবং বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে পদ্মারচর আবাসন প্রকল্প ও কন্যামতি জামে মসজিদ।
বিপন্ন পরিবারগুলোর সদস্য আয়নাল হক, সুরমান আলী, মহর মুন্সি, মলিম উদ্দিন, আব্দুল মালেক ও জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই গাঙ্গ আমাগো সবগিলা খাইল। অহন বউ-পোলাপাইন লইয়া কনে যামু? কি খাইয়া বাঁচুম?’
দুধকুমারের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বামনডাঙ্গার কুটিরচর, মুড়িয়া, আদর্শ বাজার, কুটি বামনডাঙ্গা, তেলিয়ানি, বেরুবাড়ীর খেলারভিটা, খামার নকুলা, ইসলামপুর, নুনখাওয়ার মাঝেরচর, চর পাটতলা, গুচ্ছগ্রাম, ব্যাপারীর চর, বারোবিশ, দামালগ্রাম, ফান্দেরচর, ধাউরারকুটি, নতুন-পুরাতন স্লুইসগেট ও বল্লভেরখাষ এলাকা। কুটিরচরেই গত এক মাসে ২৬ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৩ বিঘা মালভোগ কলাবাগান ও ৭০ বিঘা ডালের খেত। বিভিন্ন ইউনিয়নে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে দক্ষিণপাড়া মসজিদ, মুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামালগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বাড়ী সিনিয়র মাদরাসা ও চরলুচনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, ‘দুধকুমারের ভাঙনে আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’ গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে কচাকাটা ইউনিয়নের ধনিরামপুর, বালারহাট ও বল্লভেরখাষের মাঝিপাড়া ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন জানান, গত এক মাসে গঙ্গাধর নদী প্রায় ৫০টি বাড়ি গিলে খেয়েছে। ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষজন প্রতিনিয়ত তার কাছে সাহায্য চাইছেন, কিন্তু কীভাবে তাদের সহায়তা করবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করা হচ্ছে। তবে বাজেট স্বল্পতার কারণে সব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

