- অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটার প্রায় অচল
- ৯ চিকিৎসকের পদসহ ২০ স্টাফের পদ শূন্য
- রোগীরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ভর্তি থাকলেও অপারেশন অনিশ্চিত
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে একের পর এক শূন্যপদে চিকিৎসাসেবা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। ৫০ শয্যার জনবল ও ১০০ শয্যার খাবার-ওষুধ বরাদ্দ নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ২৫০ শয্যার ভবনের এই হাসপাতাল। বিশেষ করে ১০ মাস ধরে অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটারের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিকল্প হিসেবে একজন মেডিকেল অফিসার বা সহকারী সার্জনকে দিয়ে আপাতত কাজ চালানো হলেও তা কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলে অভিযোগ রোগী-স্বজনদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও তখন থেকে এখন পর্যন্ত জনবল রয়েছে ৫০ শয্যার মতোই। ২০১৮ সালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ছয়তলা ভবনের উদ্বোধন হলেও সাত বছরেও পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের সিনিয়র চক্ষু কনসালট্যান্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট, সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট, ইএনটি, রেডিওলজি, মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ৯ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য। পাশাপাশি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আরও ২০টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. আ. স. ম. মোস্তফা কামালকে ডেপুটেশনে এনে অ্যানেসথেসিয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার কোর্স সম্পন্ন থাকায় আপাতত অপারেশন থিয়েটার সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় ছোটখাটো অপারেশনও বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিদিন বহু রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে খরচ, চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।’
দীর্ঘদিন ধরে অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা রোগী উজির আলী বলেন, ‘এক মাস ধরে ভর্তি আছি। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন হবে, কিন্তু এখনো নিশ্চিত না। গরিব মানুষের মৃত্যুতেও শান্তি নেই।’
আরেক রোগী পারভিনা খাতুন জানান, ‘গত সপ্তাহে অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। এখন বলা হচ্ছে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
সেলিনা খাতুন বলেন, ‘১৫ দিন ধরে ভর্তি আছি। তারিখ পরিবর্তন হতে হতে আর বিশ্বাসই থাকে না কবে অপারেশন হবে।’
জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট বদলি হওয়ার পর অপারেশন থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প পথে কিছু অপারেশন করা হলেও এটি অস্থায়ী সমাধান। দুটি অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের পদ পূরণ হলে রোগীরা পূর্ণ সেবা পেতেন।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ‘১৬ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসা এই হাসপাতাল। ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ না দিলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। অপারেশন বিলম্ব, ওষুধ সংকট আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি এখন চিকিৎসার বদলে দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘হাসপাতালের সক্ষমতা ১০০ শয্যা, কিন্তু রোগী থাকে ৩৫০-এর মতো। জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট বদলি হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এখন একজন সহকারী সার্জনকে দিয়ে অস্থায়ীভাবে কাজ চালানো হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টের দুটি পদসহ সব শূন্যপদ পূরণ জরুরি।’

