ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

চরাঞ্চলে পেঁয়াজের বাম্পার আবাদ

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম
  • বীজের দাম কম থাকায় এবার পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে
  • ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে আবার দাম কমে যাওয়ার শঙ্কা
  • উৎপাদন ভালো হলে কৃষকেরা গত বছরের ক্ষতি তুলতে পারবেন

মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার বেশি আবাদ করেছেন কৃষকেরা। বীজের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় তারা এবার জমিতে বেশি পেঁয়াজ চাষ করেছেন। মাঠে এখনই বড় দানা দেখা দিতে শুরু করায় উৎপাদন ও দামের বিষয়ে আশাবাদী চাষিরা। তারা বলছেন, গত বছর ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে বাজার ভেঙে পড়ে এবং লোকসান গুনতে হয়। তবে এবার বাজারদর ভালো থাকলে লাভের মুখ দেখতে পারবেন। যদিও আবারও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের। অন্যদিকে ক্রেতারা মনে করেন, আমদানি হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।

বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়, যা খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর পাইকারিতে প্রতি মণের দাম ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং খুচরায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে, আর এ বছর চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯০০ হেক্টরে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ১০০ মেট্রিক টন।

গত রোববার সরেজমিন চরাঞ্চলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ চারার নিচে বড় দানার পেঁয়াজ দেখা দিচ্ছে। কৃষকেরা পরিচর্যার কাজের পাশাপাশি এখনো রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ছানা জানান, লিজ নেওয়া ৬ বিঘাসহ মোট ২৫ বিঘা জমিতে তিনি পেঁয়াজ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ১৫-২০ হাজার টাকা লিজ দিতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ বীজ লেগেছে, যার দাম পড়েছে প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ টাকা। চাষ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিনি বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৯০ মণ উৎপাদনের আশা করছেন। তিনি জানান, গত বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণে বাজারদর কমে যাওয়ায় কৃষকেরা লোকসান গুনেছেন। এবার বাজার ভালো থাকলে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

গত বছর প্রতি মণ পেঁয়াজবীজ কিনতে হয়েছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। চাষ, বীজ, সার, শ্রমিকসহ মোট খরচ ছিল বিঘাপ্রতি ১ লাখ টাকার বেশি। প্রাকৃতিক কারণে ফলন কমে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৬০ মণ। বাজারদর কম থাকায় বিক্রি হয়েছিল বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। গড়ে লোকসান হয় বিঘাপ্রতি প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। চরাঞ্চলের পলাশিফতেপুর গ্রামের আশাদুজ্জামান জানান, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ১০০ বিঘায় পেঁয়াজ চাষ করেছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। খানপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারও ১০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আগের বছর সাত বিঘায় চাষ করে ভালো দামে লাভ হয়েছিল। গত বছর বর্ষণে ফলন কমে যায় এবং বাজারও ভালো ছিল না।

মাঠ পরিদর্শনে আসা ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সামসুর রহমান বলেন, গত বছর ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি আমদানির কারণে স্থানীয় কৃষকরা ভালো দাম পাননি। এবার দেশেই ব্যাপক চাষ হয়েছে, যা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে আবার আমদানি হলে ক্রেতারা সুবিধা পেলেও কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ মেট্রিক টন। স্থিতিশীল বাজার থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।