ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যেখানে নদী, পাখি  প্রকৃতি একাকার

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

অনেকের হাতে সময় কম থাকে যদি মাসে এক দিনের জন্য টুরে যেতে চান, তাদের জন্য ফেনীর মুহুরী প্রজেক্ট হতে পারে সেরা একটি স্থান। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে বাসে করে ছুটতে পারেন ফেনীর উদ্দেশ্যে। পথে অবশ্য কুমিল্লায় বিরতি ১৫ মিনিটের।  খুবই ছোট্ট কিন্তু সাজানো-গোছানো একটি শহর ফেনী। রাজারঝির দীঘি ছাড়া ফেনী শহরে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। তাই ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে ও নামাজ পড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার ছুটে চলা ফেনী ও চট্টগ্রামের সংযোগস্থল মুহুরী প্রজেক্টে। ফেনী জেলা শহর হতে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অবস্থিত এই প্রকল্প। এখানেই আছে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ও দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন। আর হ্যাঁ, এ সবই ফেনী নদীকে ঘিরেই অবস্থিত। এখানে নদী, পাখি, প্রকৃতি একাকার হয়ে গেছে।

কীভাবে যাবেন?

ফেনী হতে সোনাগাজী উপজেলা বাসে তারপর সোনাগাজী হতে ব্যাটারি চালিত অটোতে যেতে পারেন। কিংবা ফেনী হতে সরাসরি সিএনজি বা কার মাইক্রো বাসভাড়া করেই চলে যেতে পারেন মুহুরী প্রজেক্টে।  ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে মুহুরী সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ও ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফেনী নদী, মুহুরী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করা হয়।

ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প।

পরিষ্কার নীল আকাশ, বাঁধের পানির প্রবল তেজ, অন্যদিকে শান্ত পানির লেক সব মিলিয়ে সেখানকার পরিবেশ অসাধারণ। চাইলেই নৌকায় চড়ে করে নিতে পারেন খানিকটা নৌবিহার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নিচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দূর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায় শীতে। যদিও শীতেই মুহুরী প্রজেক্টে বেড়ানোর সেরা সময়, তবে চাইলে যে কোনো সময়ই সেখানে যেতে পারেন। এখানে আসলে মনে হবে নদী, পাখি, প্রকৃতি একাকার হয়ে আছে।

এই মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা, বর্তমানে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানেই দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এই মুহুরী প্রকল্পের পাশেই প্রায় ৫০০ গজ দূরে থাকা খোয়াজের লামছি গ্রামে আছে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ মাঠ ও বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী আর এরই মাঝে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি টারবাইন বসানো আছে, যা দিয়ে সর্বোচ্চ ০.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বিকেলে মুহুরী প্রজেক্ট ঘুরেই পাশের বাজারে কিছু খেয়ে পেট ঠান্ডা করে ধরতে পারেন ফিরতি পথ। শহরে পৌঁছে উঠে পড়তে হবে ঢাকাগামী স্টার লাইন বা এনা বাসে। ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার ফির তে পারবেন ঢাকায়। সকালে রওনা দিয়েই সারাদিন ঘুরে রাতের মধ্যেই ফিরতে পারবেন ফেনী থেকে।