সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০১:০০ এএম

ভূয়া নামজারিতে জমি আত্মসাৎ

জাল দলিলে সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০১:০০ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জাল দলিলের জালিয়াতিতে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগ দখলে থাকা জমির মালিক আজ দিশেহারা। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনায় জমির দাম তুঙ্গে। চাহিদার তুলনায় শহরে জমি কম থাকায় মহানগরের আশপাশ এলাকায় জমি কেনায় রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

অভিযোগ রয়েছে, জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি নামজারি করে নিজেদের মধ্যেই বিক্রি করে জমি হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। শুধু নামজারি নয়, বেশ কয়েকটি মূল্যবান সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার লক্ষ্যে জাল দলিলের মাধ্যমে আদালতে মামলাও করেছে এই চক্র।

খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার মোস্তফার মোড় এলাকায় এভাবে আসল জমির মালিককে অন্ধকারে রেখে একজনের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এ জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে রায়েরমহল এলাকার বাসিন্দা মো. মকিতুর রহমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্র। এক সময় এই মকিতুরের পূর্বপুরুষ ওই এলাকায় অনেক জমির মালিক থাকায় জমি হাতাতে নিজেই সাজেন দাতা। যাতে হাতিয়ে নেওয়া জমি বিক্রিতে কারো সন্দেহ তৈরি না হয়। আর গরিব ভূমি মালিকের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় চক্রটি।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মো. মকিতুর রহমানের নামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার ৮৯২৯ খতিয়ানে নামজারির আবেদন অনুমোদিত হয় এবং তিনি ডিসিআর কাটেন। মকিতুর অক্টোবর মাসে মিজান মোল্লার ছেলে সৈকত মোল্লার কাছে এই আট শতক জমি বিক্রি করেন। পরে মকিতুর লোকজন নিয়ে দলিল ও নামজারি দেখিয়ে চক্রটি জমির দখল নেয়।

সরেজমিন দেখা যায়, ডুমুুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার মোস্তফার মোড় থেকে কৈয়া বাজার যেতে রাস্তার পাশে একই জমিতে দুটি সাইনবোর্ড। একটি সাইনবোর্ডে লেখা ওয়ারিশ সূত্রে শেখ আকতার হোসেন, শেখ ফেরদাউষ হোসেন ও শেখ রফিকুল ইসলাম মুকুল এক দশমিক ৭০ একর জমির মালিক। পাশেই নতুন করে ঘেরা দেওয়া আট শতক জমি। সাইনবোর্ড দেওয়া জমিতে। সেখানে লেখা ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক সৈকত মোল্লা।

জমির মূল মালিক শেখ ফেরদাউষ হোসেন বলেন, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওয়ারিশ সূত্রে আমরা তিন ভাই এ জমি ভোগ দখলে আছি। কিছুদিন আগে হঠাৎ জানতে পারি, আমাদের ১৭০ শতক জমির মাঝে সামনে থেকে ৮ শতক জমি ঘেরাও দিয়ে সৈকত মোল্লা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তার লোকজন নিয়ে। পরে তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, সে জমি কিনেছে মকিতুর রহমানের কাছ থেকে। আমরা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখি মকিতুর জাল দলিল দিয়ে নামজারি করে আমাদের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এখন এই চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ জমি পাব কি না জানি না। আমরা অসহায় হওয়ায় আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে এই মকিত মিজান চক্র।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, ডুমুরিয়া ভূমি অফিসের নামজারি ১৭২৬/২০২৪-২৫ অনুমোদিত মামলায় ৮৯২৯ খতিয়ানে দেখা যায়, রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল করিমের কাছ থেকে ২৮১০/১৯৯৮নং কবলা দলিল মূলে মো. মকিতুর রহমান ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ জমির মালিক। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ আবেদনে যে দলিল জমা দেওয়া হয়েছে সেটি একটি জাল দলিল। এ প্রতিবেদক নামজারির আবেদনে উল্লেখিত দলিল নাম্বার তারিখ ঠিক রেখে জেলা রেকর্ড রুম খুলনা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নকল তুলতে দিলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। আসল দলিলে দেখা যায়, সেখানে দাতা গ্রহীতা ভিন্ন। আসল দলিলের তথ্যের সঙ্গে অনুমোদিত নামজারির তথ্যের কোনো মিল নেই।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন বলেন, আমরা দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্র দেখে শুনানির মাধ্যমে নামজারি অনুমোদন করে থাকি। ভুলবশত জাল দলিলে কোনো নামজারি অনুমোদন হয়ে থাকলে ১৫০ ধারায় জমির আসল মালিক আবেদন করলে তা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বাতিল করার সুযোগ আছে। অথবা স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নামজারি বাতিল করা যাবে।

খোঁজ নিয়ে আর দেখা যায়, মুকিতুর রহমান বাদী হয়ে এর আগে ডুমুরিয়া উপজেলার বিল পাবলা মৌজায় আরও কয়েকটি জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। খুলনার জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে ১০৭৩/৯৩ নম্বর কবলা দলিল মূলে এক একর জমির মালিকানা দাবি করে ১১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে দেঃ ৭৬/১৬  মামলা দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এসে এই মকিতুর রহমান ১৩৪০/৮৩ দলিল মূলে ৭৫ শতক জমির মালিকানা দাবি করে ৩০ জুন ২০২১ তারিখে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ডুমুরিয়া খুলনায় ১৮৬/২১ মামলা দাখিল করেন। তিনি এ দুটি মামলায় যে দুটি দলিল দাখিল করেছেন জেলা রেকর্ড রুম খুলনা থেকে তার নকল উঠালে দেখা যায়। এ দলিলগুলো জাল। এই নাম্বারের আসল দলিলে দাতা, গ্রহীতা ভিন্ন ব্যক্তি।

সৈকত মোল্লা বলেন, আমি টাকা দিয়ে মকিতুর রহমানের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেছি। আমার বাবা মিজান মোল্লা ভালো বলতে পারবেন। তিনি সব কাগজপত্র দেখে এই জমি ক্রয় করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে মো. মকিতুর রহমান বলেন, আমি নামজারি করি নাই। নামজারি করেছে সৈকতের আব্বা। তার বাবা মিজান মোল্লা নিজেই সব কাগজ প্রস্তুত করেছে। আমি যে দলিল দিয়েছি তা আমার বাবার জমি। আর কাগজ ঠিক আছে কি না তা আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। পরক্ষণে তিনি আবার বলেন, আমি যে দলিল দিয়ে মামলা করেছি সেগুলো তখন ঘরে পাইছি। এ কারণে সেগুলো মামলায় দিছি। পরে জানতে পারছি এগুলো ঠিক নাই। তাই কদিন আগে এভিডেভিট করছি।

মিজান মোল্লা বলেন, আমি কাগজপত্র দেখে আমার ছেলের নামে জমি ক্রয় করেছি। মকিতুর আমার নামে যে অভিযোগ তুলেছে তা মিথ্যা। তার জমি আমি কীভাবে নামজারি করব। সেসব করে দিছে। আমি কিনেছি মাত্র।

খুলনা মহানগরের সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে এসব জাল দলিল তৈরি করে নেয় ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্ররা। মূলত মকিতুর রহমান, মিজান মোল্লা ও সৈকত মোল্লা একই সুতায় বাঁধা একটি চক্র। এদের সঙ্গে রয়েছে ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তি। এ ছাড়া এ জালিয়াত চক্র সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অসাধু রেকর্ডকিপার ও নকলনবিশ অর্থের বিনিময়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে তথ্য উঠে আসে।

আরবি/জেডআর

Link copied!