তপ্ত মরুভূমির প্রাণী দুম্বা এখন গাইবান্ধার সবুজ প্রকৃতিতে পালন করা হচ্ছে। এক সময় সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করতে হতো এই প্রাণী। সেটাই আজ স্থানীয়ভাবে লালন-পালনের মাধ্যমে প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা জাহিরুল ইসলাম জাহিদ।
সাত মাস আগে মাত্র কয়েকটি দুম্বা দিয়ে শুরু করেছিলেন শখের খামার। আজ তার খামারে প্রতিটি দুম্বার বাজারমূল্য আড়াই থেকে চার লাখ টাকা। তবে এখনই বিক্রির চিন্তা নয়, তার লক্ষ্য দুম্বা খামার সম্প্রসারণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া।
জাহিদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে হলেও খামার গড়ে তুলেছেন গাইবান্ধার দড়ি জামালপুর গ্রামে। মেঠোপথ, ধানখেত আর নিভৃত সবুজে ঘেরা গ্রামে লাল টিনের ছাউনি দেওয়া খামারটি এখন এলাকাবাসীর গর্ব।
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করেন জাহিদ। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও প্রাণী পালন নিয়ে আগ্রহ থেকে শুরু করেন দুম্বার খামার। ছোট ভাই জিন্নাহ মণ্ডল খামারের দেখভাল করেন। দুজনের মিলিত স্বপ্ন, উন্নত জাতের দুম্বা এবং ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলা।
খাবার হিসেবে ঘাস, পাতা, খড়, ভুষি ও সরিষার খৈল এসবই খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন রুটিন মাফিক খাবার ও যত্নে কোনো কমতি রাখেন না তারা। মরুভূমির প্রাণী হলেও বাংলাদেশের পরিবেশে দুম্বা সহজেই মানিয়ে নেয় বলে জানালেন জিন্নাহ।
তিনি বলেন, প্রথমে মনে হয়েছিল এই গ্রামে এ ধরনের খামার সফল হবে না। কিন্তু এখন প্রতিদিনই মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দুম্বা দেখতে।
দুম্বার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশি। ফলে চিকিৎসার খরচ কম। তিন মাস পরপর কৃমিনাশক দিলেই চলে।
জিন্নাহ বলেন, এরা খুব শান্ত প্রাণী, দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে, গরু-ছাগলের মতো নয়।
খামার দেখতে আসা দর্শনার্থীরা যেমন আগ্রহী হচ্ছেন, তেমনি এলাকার মানুষরাও জাহিদের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত।
স্থানীয় যুবক ফজলুল করিম চয়ন বলেন, এই খামার আমাদের এলাকার জন্য দৃষ্টান্ত। দুম্বা পালন লাভজনক, কম পুঁজিতেও শুরু করা যায়।
খামারে থাকা প্রতিটি দুম্বার ওজন ৭৫ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। ছয় মাস বয়সি দুম্বার দাম পড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বয়স্ক দুম্বার দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জাহিদ চান, কোরবানির হাটে যেন দুম্বা সরবরাহ বাড়ানো যায়।
তিনি বলেন, সবাই গরু-ছাগল কিনছে। দুম্বার চাহিদা থাকলেও সরবরাহ নেই। আমি চাই দেশের প্রতিটি জেলায় দুম্বা পৌঁছে যাক।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ জানান, জেলায় দুম্বা পালন বাড়ছে। প্রান্তিক খামারিরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভেড়া ও গাড়ল পালনের মতোই দুম্বা পালন সম্ভব। বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের দরকার নেই।
তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় দুই লাখ ২৪ হাজার কোরবানির চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে প্রায় তিন লাখ ৬৩ হাজার গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়ার পাশাপাশি দুম্বার সংখ্যাও বাড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :