বাগেরহাটের ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল চলছে এখনো ১০০ শয্যার জনবল ও বরাদ্দে। চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান সংকট, ওষুধের ঘাটতি এবং তালাবদ্ধ আইসিইউ ইউনিট সব মিলিয়ে চরম সংকটে পড়েছে জেলার অন্যতম প্রধান এই সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পরিবর্তে নার্স দিয়ে সেবা চালানো হচ্ছে, এতে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছেন রোগীরা।
১৯৭০ সালে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও ২০২২ সালের মে মাসে এটিকে উন্নীত করা হয় ২৫০ শয্যায়। কিন্তু আজও পূর্বের ১০০ শয্যার জনবল ও বরাদ্দেই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। দৈনিক বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৯শ থেকে ১ হাজার রোগী, আর ভর্তি থাকে ২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৩৫০ জন।
৫৬টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২৮টি শূন্য, নার্সের ৯৮টি পদের মধ্যে ৩২টি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ৭৭টি পদের মধ্যে ৪৪টি এখনো পূরণ হয়নি। ফলে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রোগীর স্বজন ইমরান অভিযোগ করে বলেন, আমার নানু সাত দিন ধরে ভর্তি, বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। নার্সদের ডাকলেও পাওয়া যায় না। অনেক অনুরোধে তারা আসে। রাত ১২টার পর গেটে তালা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়। এমনকি স্যালাইন দিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও স্বজনদের হাতে দিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারহানা বলেন, শুধু জনবল নয়, ওষুধ ও অর্থ সংকটও প্রকট। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেক জটিল রোগীকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু হলেও জনবল সংকটে তা এখনো তালাবদ্ধ। ফলে গুরুতর রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না।
নার্সিং অফিসার ফয়সাল ফারাবি জানান, আমি ব্যক্তিগত কারণে এখানে থাকি। তবে ডাক্তারদের অনুমতিতে মাঝে মাঝে রোগী দেখি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, আমরা এখনো ১০০ বেডের জনবল ও বাজেটেই কাজ চালাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় জনবল ও বাজেট বরাদ্দ পেলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারবো। আইসিইউ ইউনিটটি তালাবদ্ধ, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অপচয়ের মুখে। মানুষ সেবা পাচ্ছে না, এটা খুবই দুঃখজনক।
জেলার জনগণের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত জনবল ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করে বাগেরহাটের মানুষকে আধুনিক ও মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবে।
আপনার মতামত লিখুন :