ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তখন বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া যাচ্ছে চরম অব্যবস্থাপনার খবর। সরাসরি অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়্যাদ আমারুল-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তার দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং যোগাযোগের অযোগ্যতার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বেতাগীর পাশ্ববর্তী মির্জাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও দৈনিক নয়া দিগন্ত'র সংবাদদাতা উত্তম গোলদারের এক স্বজন জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু সন্দেহে দ্রুত বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষা কিংবা উন্নত চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। তার চেয়েও অবাক করার বিষয়, রোগী ভর্তির জন্য নাকি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমতির প্রয়োজন!
এরপর উত্তম গোলদার বারবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়্যাদ আমারুল-কে ফোন করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। শুধু তিনিই নন, নয়া দিগন্তের বেতাগী প্রতিনিধি আলহাজ্ব কামাল হোসেন খান এবং কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধি স্বপন কুমার ঢালীও একইভাবে ফোন করে কর্মকর্তার সাড়া না পেয়ে হতাশ হন। উপায়ান্তর না দেখে, গভীর রাতে রোগীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষার পর নিশ্চিত করা হয়- রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
সরাসরি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও, বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা কিংবা জরুরি সেবার কার্যকর ব্যবস্থা।
মোকামিয়া ইউনিয়নের এক ভুক্তভোগীর ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাই জ্বরে কাঁপছিল, সন্দেহে হাসপাতালে এনেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার পেলাম না, রক্ত পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই। শেষে বরিশালেই নিতে হলো।’
সাধারণ রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসা পেতে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, অনেক সময় চিকিৎসকই অনুপস্থিত থাকেন বা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে অক্ষম হন।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, ডেঙ্গুর মতো জাতীয় স্বাস্থ্যসংকটের মুহূর্তে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কেন নাগালের বাইরে থাকবেন? কেন ফোন ধরবেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকেই।
এই বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়্যাদ আমারুল-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে, এ অভিযোগ জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি আশ্বাস দেন,
‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যখন সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের এমন অবহেলা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। অনেকেই বলছেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অনাগ্রহ যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে বেতাগীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দ্রুতই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।