বরগুনার তালতলী থানার এসআই অসীম চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ এনে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় এক ভুক্তভোগী পরিবার। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলার তাতীপাড়া গ্রামের চুন্নু মৃধার বড় ভাইয়ের ছেলে রিপন মৃধাকে পূর্বশত্রুতার জেরে গত মার্চ মাসে কয়েকজন ব্যক্তি গুরুতরভাবে মারধর করেন। এতে রিপন মৃধা মারাত্মক আহত হলে প্রথমে তাকে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেষে শেরে বাংলা নগর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, তার চিকিৎসায় প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার তালতলী থানায় গত ৩১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করে। পরে আসামিপক্ষ প্রতিশোধ নিতে গত ২২ এপ্রিল বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে একটি ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পাল্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অসীম চন্দ্র দাস শুরু থেকেই বাদীপক্ষের অনুসারীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। অভিযোগকারীর দাবি, তদন্ত কর্মকর্তা তাদের বলেন— ‘বাদীর সঙ্গে বরগুনার বড় বড় প্রভাবশালী নেতারা জড়িত, তাই অভিযুক্তরা কিছুই করতে পারবেন না’ এবং তাদের আপসে রাজি হতে চাপ দেন।
চুন্নু মৃধা অভিযোগে উল্লেখ করেন, তদন্তের স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য নিরপেক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ দিলেও এসআই অসীম চন্দ্র দাস বাদীর প্রভাব খাটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিলের হুমকি দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পেতে বাধ্য হয়ে গত ২৫ জুলাই নিজ বাসায় বসে তদন্ত কর্মকর্তাকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। তবে টাকা দেওয়ার পরও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চার্জশিট দাখিল করেন বলে দাবি করেছে পরিবারটি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবারটি অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগকারীর ভাষ্য। ঘুষ দেওয়ার ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে অভিযোগপত্রে স্থানীয় ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ সদস্যদের এমন আচরণ সাধারণ মানুষের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে এসআই অসীম চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে চার্জশিট দাখিল করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক।’
অভিযোগকারী চুন্নু মৃধা বলেন, ‘আমাদের ছেলে মরে যাওয়ার মতো মারধর করেছে। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে টাকা নিতে হয়েছে। অথচ এখনো সুবিচার পাইনি।’
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবার উচ্চপর্যায়ের স্বচ্ছ তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগটি দ্রুতই সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




