ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হেলাল মিয়া ও তার পরিবার ‘মাদ্রাসাছাত্রদের’ কাছে হুমকি পাওয়ার কারণে ছয় দিন গান বন্ধ ছিল। তবে বাধা পেরিয়ে ফের গানের আসরে ফিরেছেন তারা। গানের আসরে ফিরলেও তবে এখনো ভয় কাটেনি জন্মান্ধ এই পরিবারটির। হুমকি দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ কোনো পদক্ষেপও নেয়নি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে তারা গান গাইতে আসেন।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে কয়েকজন এসে হেলাল মিয়াকে গান-বাজনা বন্ধ করে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বলেন এবং বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুরের হুমকি দেন। এ কারণে আতঙ্কে গান বন্ধ করে দেন হেলাল ও তার পরিবার। ফলে তাদের দৈনিক রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে পৌর মুক্তমঞ্চে আধ্যাত্মিক গান- মারফতি, মুর্শিদী ও কাওয়ালি গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন হেলাল মিয়া। শুধু তিনি নন, তার পরিবারের আরও আটজন সদস্য জন্ম থেকেই অন্ধ। গানই তাদের একমাত্র জীবিকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়ার চার ছেলে, এক মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তারা গান শুনিয়ে মানুষজনের দেওয়া টাকা দিয়ে সংসার চালান।
হেলাল মিয়া বলেন, ‘ছয় দিন রোজগার বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন গেছে। কচি ভাই (জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা) সাহস দেওয়ার পর আজ আবার গান শুরু করেছি। তবে যেখানে বসতাম, তা হকাররা দখল করে ফেলেছে- পাশের জায়গায় গান করতে হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, আজ কোনো সমস্যা হয়নি, তবে আগের ঘটনার কারণে ভয় কাটেনি। এর আগেও দুই দফা গান বন্ধের হুমকি পেয়েছিলেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার প্রিন্সিপাল ও জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি মুবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা বাধা দিয়েছে- এটা আমি জানি না। শরীয়তে গান নিষিদ্ধ, তবে কাউকে বাধা দিতে বলা হয়নি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, ‘আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন