বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জাহিদুল ইসলাম, কুবি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি : জানেন না ‘অভিযোগকারীরা’

জাহিদুল ইসলাম, কুবি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মচারী ও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ১৩টি অভিযোগ করে কর্মচারী নিয়োগে আবেদনকারী ছয় জন প্রার্থীর নাম যুক্ত একটি অভিযোগপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে উল্লিখিত অভিযোগগুলোর কোনো প্রমাণ ওই চিঠিতে দেওয়া হয়নি। 

অভিযোগকারীদের মধ্যে পাঁচ জন এই অভিযোগপত্রের বিষয়ে জানেন না বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। একজন অভিযোগকারী ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে, এই অভিযোগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও দুজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি কর্মচারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি পদে পুনর্বিজ্ঞপ্তি ছিল। ২৭ মে থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা (লিখিত, ব্যবহারিক, মৌখিক) নেওয়া হয়।

এই নিয়োগে আবেদন করা ছয় জন প্রার্থীর নাম সংযুক্ত একটি চিঠি ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট সভায় সদস্যদের অনুপস্থিত রাখাসহ ১৩টি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। 

এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক মতামত প্রদানের নির্দেশ দেয়।

‎চিঠিতে নাম থাকা কর্মচারী পদে ছয় জন আবেদনকারী হলেন মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম (পি টু রেজিস্ট্রার), মো. দিদার আলম (কেয়ারটেকার), নাজমুল হোসেন, এ আর আবুল কালাম, (হিসাবরক্ষক)। মোসা. মায়া আক্তার (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট), মিলি আক্তার (অফিস সহায়ক)।

চিঠিতে থাকা অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আবু তোরাবকে উপাচার্যের ভাগিনা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও উপাচার্যের বোন চুয়াডাঙ্গায় এবং তোরাবের বাড়ি খুলনায়। ফটোগ্রাফার পদে নিয়োগ পাওয়া আকিব মুর্তাজাকে উপাচার্যের ভাইয়ের স্ত্রীর আত্মীয়ের ছেলে উল্লেখ করা হয়, যদিও তার বাড়ি রংপুরে এবং তিনি ২০২৩ সালে চা বোর্ডে চাকরিরত অবস্থায় কুবিতে আবেদন করেছিলেন। 

মুর্তাজা জানান, ‘চা বোর্ডেও আমি ফটোগ্রাফার পদে ছিলাম, তবে কুবিতে গ্রেড উপরে, তাই এখানে আবেদন করেছি।’

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে নিয়োগ পাওয়া হুমায়ুন কবিরকে উপাচার্যের কলিগের আত্মীয় উল্লেখ করা হলেও তার পরিবারের কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন না। পিএ টু রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পাওয়া মো. আব্দুল্লাহকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আনোয়ারের চাচাতো বোনের ছেলে হিসেবে উল্লেখ করা হয়, কিন্তু অনুসন্ধানে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ পাওয়া মো. মতিউর রহমানকে অধ্যাপক আনোয়ারের স্ত্রীর বোনের ছেলে হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তার স্ত্রীর বোনের ছেলে একজন ফিনল্যান্ডে এবং একজন বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়ছেন। অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. আলামিনকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিমের ভাগিনা উল্লেখ করা হয়, কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, তার কোনো ভাগিনা কুবিতে নিয়োগ পাননি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং বিভাগীয় কমিশনারকে অনুপস্থিত রাখা হয়েছে। 

তবে খোঁজে জানা যায়, সিন্ডিকেট সভায় বিভাগীয় কমিশনার ছাড়া বাকি দুজন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। পদাধিকার হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য বিভাগীয় কমিশনার। তবে ব্যস্ততার কারণে প্রায় সব সভায় তিনি অনুপস্থিত থাকেন।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ২৩ জন শিক্ষক নিয়োগে ৩-৪ কোটি টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এমন অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগ পাওয়া ৩ জন শিক্ষক সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। 

নিয়োগ বোর্ডের দুজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে মনে হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ে আমি জানি না, তবে আমার কাছে কেউ তদবির করেনি।’

কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের নিয়োগে ১০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, যার মধ্যে সাত জন মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেছে। আমি মনে করি এখানে কোনো রাজনৈতিক সুপারিশ বা টাকার লেনদেন হয়নি।’

অভিযোগপত্রে কর্মচারী নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত। অনেক সময় একজন থেকে অন্যজনের নম্বরের ব্যবধান ০.৫ থাকে, ফলে অনুরোধের কারণে আমরা প্রকাশ করি না।’

পরীক্ষার্থীদের কার্ড নির্ধারিত সময়ে পাঠানো হয়নি এবং শুধুমাত্র পছন্দের প্রার্থীদের ফোন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হলেও সংস্থাপন শাখায় খোঁজে দেখা গেছে, প্রতিটি পদে ৫-৭ জনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছে এবং তাদের সবাইকে একই সময়ে কার্ড ডাকে পাঠানো ও ফোন করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা ছয় জন প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে মো. দিদার আলম, মিলি আক্তার, আরিফুল ইসলাম ও নাজমুল হোসেন বলেন, তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না এবং তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। মায়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগে তিনি জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষায় তার কম্পিউটারটির কিবোর্ডে সমস্যা ছিল এবং নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীই অভিযোগ দিয়েছে, আমি কিছু বলতে পারি না।’

খোঁজে জানা গেছে, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, ল্যাব নিয়মিত ব্যবহৃত হয় এবং সব কম্পিউটারে ওয়াইফাই সংযোগ আছে, কোনো ত্রুটি নেই।

অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘আমি একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। আমরা জানতাম পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হবে, কিন্তু মাত্র ২৫ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পূর্ব পরিচিতি ছিল না।’ আবুল কালাম ও মায়া আক্তার জানান, তারা একই এলাকার, কিন্তু সম্পর্ক নেই। পরে জানা যায়, আবুল কালাম মায়া আক্তারের স্বামী।

একজন কর্মচারী প্রার্থী অভিযোগ পত্র লেখা বিষয়ে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও শিক্ষক অভিযোগ পত্রটি লিখিয়েছেন।’ গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পত্রের পিছনে সাবেক রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান মজুমদারের যোগসাজশ থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমার এই বিষয়ে কিছু মনে নেই, অনেক আগের ঘটনা।’

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দিয়েছি। এখানে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। দুদক যা চেয়েছে আমি সব কাগজপত্র দিয়েছি। তারা তদন্ত করুক। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের একটি দল প্রশাসনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার, নিয়োগসহ সার্বিক কার্যক্রম কোনো একক ব্যক্তি (উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বা ট্রেজারার) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরম্যাট এবং বিভিন্ন কমিটি থাকে, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের পর্যালোচনা, স্বাক্ষরসহ নথিপত্র থাকে। তার ধারাবাহিকতায় কাজ সম্পন্ন হয়। কোনো একক ব্যক্তির দ্বারা অনিয়ম করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে, আমি সরকারের শাস্তি স্বীকার করব।’

কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষায় আমি সদস্য ছিলাম। এখানে কোনো স্বজনপ্রীতি দেখা যায়নি। লিখিত পরীক্ষার জন্য আমাকে প্রশ্ন তৈরি করতে বলা হয়েছিল, তা করেছি।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘গত ২০ বছরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বড় অংশ তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি ছাড়া নেওয়া উচিত ছিল না। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই অভিযোগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের কেউ লিখেছেন বলে মনে হচ্ছে। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে আইনত পদক্ষেপ নেব।’

এই বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সাধারণত কোনো অভিযোগ আসলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাখ্যা চাই, এরপর বাকি ব্যবস্থা নিই।’

Link copied!