চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় স্কুলের এক প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে গাছের খুটির সঙ্গে বেঁধে পেটানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। শনিবার (২৮ জুন) রাতে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আবদুর রহমান বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বুচির পাড়া এলাকার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে।
আবদুর রহমান জানান, তাদের পরিবার ও স্থানীয় আবু বক্করের পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি বিরোধটি আরও তীব্র আকার ধারণ করে। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে মো. হানিফ নামের স্থানীয় এক দোকানদার তাকে কৌশলে দস্তিদার হাট বাজারে ডেকে নেন। সেখানে পৌঁছানোর পর হানিফ, হান্নান, সোহাগ, ইকবাল, আবু বক্কর ও মুসলিম উদ্দিন হিরুসহ ১০–১২ জন মিলে তাকে একটি দোকানের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা তাকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে ছুরি দিয়ে পেটে আঘাতের হুমকি দেওয়া হয় এবং দলবদ্ধভাবে মারধর করা হয়। এতে তিনি চোখে গুরুতর আঘাত পান এবং বর্তমানে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।
এদিকে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন এবং তার চারপাশে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন।
অভিযুক্ত মো. হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে অভিযুক্তদের একজন মুসলিম উদ্দিন হিরু ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, শিক্ষক আবদুর রহমানের পরিবারের ১২ ভাইবোন তাদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ১০ জন রেজিস্ট্রি করে দিলেও আবদুর রহমান নিজের অংশ বিক্রি না করেই অতিরিক্ত জায়গা দখল করে রেখেছেন।
হিরুর দাবি, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। ঘটনার দিন কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয় এবং পরে তাকে বেঁধে রাখা হয়। তবে তার পোস্টে মারধরের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘একজন শিক্ষককে জনসমক্ষে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি নিজেও ভিডিওটি দেখেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’