ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

সন্তানকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে স্ত্রীকে ১১ টুকরো করলেন স্বামী!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
সুমন ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাইরে তখন প্রবল বর্ষণ। গভীর রাত। চারদিক নিস্তব্ধ। এরই মধ্যে বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির এফজে টাওয়ারের ১০ম তলা থেকে ভেসে আসে অস্বাভাবিক শব্দ। প্রথমে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু পানির পাইপে কিছু পড়ার আওয়াজে সন্দেহ হয় বিল্ডিংয়ের দারোয়ান মশিউর রহমানের।

সন্দেহ নিয়ে তিনি উঠে যান দশম তলায়। দরজায় নক করলেও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয় না। অপেক্ষার পর ঘরের দরজা খুলে দেয় বাসিন্দা সুমন। তখনও তিনি ভাবতেও পারেননি যে ঘরের ভেতর অপেক্ষা করছে এক বিভৎস দৃশ্য!

টয়লেটে ঢুকেই চমকে উঠেন মশিউর। কমোডে পড়ে আছে মাংসের টুকরো। স্ত্রীর অবস্থান জানতে চাইলে সুমন কৌশলে বলেন, ‘বাড়িতে নেই।’ সন্দেহ দানা বাঁধে। এবার বক্সখাট সরিয়ে দেখা যায় দুটি কাটা পা! আতঙ্কে কেঁপে ওঠে দারোয়ান। দরজা বন্ধ করে দ্রুত নিচে নেমে খবর দেন এলাকাবাসী ও পুলিশকে।

ততক্ষণে পাষণ্ড স্বামী গ্রিল কেটে দশতলা থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র চাঞ্চল্য। পুলিশ এসে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ৩২ বছর বয়সি ফাতেমা বেগমের ১১ টুকরো করা মরদেহ।

প্রায় দেড় মাস আগে সুমন ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ভাড়া নিয়েছিলেন এ জেড টাওয়ারের দশম তলায় একটি ফ্ল্যাট। তাদের আট বছরের ছেলে সিফাত তখন ছিলেন আত্মীয়ের বাসায়।

কেয়ারটেকার জানান, বৃষ্টির রাতে ওই ফ্ল্যাট থেকে সন্দেহজনক শব্দ আসছিল। এরপর তিনি ও কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাটে গিয়ে আবিষ্কার করেন বিভৎস এই হত্যাকাণ্ড।

প্রতিবেশীরা জানান, বাসা ভাড়া নেওয়ার কয়েকদিন পর ফাতেমা চলে গিয়েছিলেন, পরে আবার ফিরে আসেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল।

ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ঘাতক সুমন। তার পেশা গাড়িচালক। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে খুন করতে সে ছুরি ও চাপাতি ব্যবহার করেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে মেঝে, খাট ও টয়লেটে ফেলে রেখেছিল সে। এমনকি হাড় থেকেও মাংস আলাদা করে ফেলা হয়েছিল।

বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি পারিবারিক কলহ থেকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে হলেও তারা চট্টগ্রামে বসবাস করতেন।’

ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া। কেউ ভাবতেই পারছে না, যে মানুষ এতদিন তাদের সঙ্গে বসবাস করত সে এমন নৃশংস হতে পারে! এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ জানিয়েছে, খুনিকে আটকের চেষ্টা চলছে।