বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘এখনো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এখনো শুনছি, তারা ডাকাতি, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সতর্ক করছি, বিএনপির সেই সব মোনাফেকদের, যারা তাদেরকে সহায়তা করছে। এই মানুষদের আমাদের দলে কোনো জায়গা নেই। আমরা এখন নির্বাচনমুখী, সেজন্য আমাদের অনেক কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। নির্বাচন হতে আর তিন-চার মাস। তারপরে পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না।’
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়ন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদুয়ার রাজারহাট ফুটবল খেলার মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হুমাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কিছু দোসর এখনো ঘুরঘুর করছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। তারা এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে, অপেক্ষায় আছে কখন তারা আক্রমণ করবে আমাদের উপরে। তবে সতর্ক করে দিতে চাই, হয়ত আমাদের উপর যেভাবে জুলুম করেছেন, সেভাবে করব না, তবে সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা আছেন, পুলিশ ভাইয়েরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। আপনাদের কাজ হচ্ছে এদেরকে ধরিয়ে দেওয়া।’
বিএনপিতে চাঁদাবাজ-দালালদের কোনো জায়গা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল। এখানে চাঁদাবাজদের কোনো জায়গা নেই, আওয়ামী লীগের দালালদের কোনো জায়গা নেই। যখন বিশৃঙ্খলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব উত্তরজেলা কমিটি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা সিগনাল। নিজের দল গুছাতে হবে, বাড়ি গুছাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা পদে বসে আছে, তারা যদি সেই পদের ফায়দা নিতে চেষ্টা করে, তাহলে তাদেরকে আর পদে রাখা হবে না। সেটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি মনে করে থাকেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি না, তবে আমার বিরুদ্ধেও আপনারা অভিযোগ দেবেন। দরকার হলে তারেক রহমান সাহেব আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। মনে রাখতে হবে, কেউ দলের উপরে নয়। আমাদের সকলের দলের প্রোটোকল মেন্টেইন করতে হবে।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পদুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম মেম্বার। প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক মুহাম্মদ শওকত আলী নূর। সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জহির উদ্দিন বাবর ও যুবদল নেতা মো. রাসেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবছার হোসেন তালুকদারসহ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
বিএনপি দল প্রসঙ্গে হুমাম কাদের চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে এমন একটি দল, যেটা জনগণের পাশে থাকে। এই দল আওয়ামী লীগের মতো লুটেরা না, আওয়ামী লীগের মতো ধর্ষণকারী না। আমাদের দল গরীব মানুষের পাশে থাকে। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে। আমাদের দল, বাংলাদেশের সকল মানুষের দল। আমাদের দায়িত্ব হয়ে গেছে, তারেক রহমান সাহেবের ৩১ দফার বার্তা প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া।’
সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পদুয়ায় হাসপাতালের ডিজাইন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী করে গিয়েছিল। ১৮ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। কোথায় সেই হাসপাতাল? হাছান মাহমুদ বলে পদুয়ার সন্তান। নিজ বাড়িতে একটা হাসপাতাল করতে পারলো না, ডাক্তার আনতে পারলো না। সেই হাছান মাহমুদ এখন আর দেশে নেই, পদুয়াবাসীকে একটা ডাক্তার দিয়ে যেতে পারলো না। আশা করি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান দুই-তিনটা ডাক্তার বেধে নিয়ে আসতে পারবে।’
হেফাজত ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট ও জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে হুমাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, গত ১৭ বছর ধরে সব বিরোধী দলই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশকে গুছিয়ে নেওয়ার। রাস্তায় হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ব্যানার দেখা গেছে। এরা কেউই আমাদের বাইরে নয়। গত ১৭ বছর ধরে তারা আন্দোলনে আমাদের পাশে ছিল। আমরা কাউকে ছোট চোখে দেখি না।’
এদিকে পদুয়ার এই জনসভাকে ঘিরে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়াজুড়ে ছিল উৎসব আমেজ। ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ভরে গিয়েছিল মাঠ। মিছিল নিয়ে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। তাদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির এই জনসভা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।