শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

কক্সবাজারে নৈরাজ্য-অব্যবস্থাপনায় হারাচ্ছে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

কক্সবাজার  সমুদ্র সৈকত। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। অথচ এই আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন গন্তব্য আজ নানামুখী অব্যবস্থাপনা, দখল ও বিশৃঙ্খলার চাপে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাতে শুরু করেছে।

পর্যটকদের অভিযোগ, বিচের সৌন্দর্য রক্ষায় যেসব পরিকল্পনা, তদারকি ও আধুনিকায়ন জরুরি ছিল, তার কিছুই নেই মাঠপর্যায়ে। বরং যা আছে, তা হচ্ছে নানাচিত্রের অসংগতি।

তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর সৈকত নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী এই তিনটি প্রধান পয়েন্টে চোখে পড়ে অগণিত অস্থায়ী দোকান। টি-স্টল, আচার বিক্রেতা, শামুক-ঝিনুকের দোকান, প্লাস্টিকের খেলনা সব মিলিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে এলোমেলো সাজে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার ঝুপড়িঘর।

পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদিত ডিজাইনে দোকানগুলোর গঠন ও রং-রূপ এক করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিজাইন দেওয়া হলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে পর্যটন অঞ্চল এলোমেলো হয়ে থাকছে বছরের পর বছর।

সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কিটকিট ছাতা-চেয়ার বসালেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একটি চেয়ারের সঙ্গে আরেকটি এমনভাবে লাগানো থাকে যে, রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও সৈকতে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলা কষ্টকর হয়ে যায়।

পর্যটকদের অভিযোগ, সৈকতে নামতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় লম্বা লাইন। মনে হয় যেন চেয়ার-জঙ্গল। এগুলোর অনুমতিপত্র জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হলেও ম্যানেজমেন্টের দৃশ্যমান তদারকি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় হোটেল-মোটেল মালিকদের।

তাদের মতে, সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষিত বালিয়াড়ি অঞ্চল। পরিবেশগত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখানে নির্মিত হচ্ছে বহু কংক্রিট স্থাপনা।

স্থানীয় পরিবেশ পর্যবেক্ষকদের মতে, বালিয়াড়ি দখলের এই প্রবণতা চলতে থাকলে সৈকতের প্রাকৃতিক বালুকাবেলা দ্রুত ক্ষয়ে যাবে।

ইসিএ এলাকায় যে কোনো স্থাপনা সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। কিন্তু পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় দখলদাররা বালিয়াড়ির বুক চিরে দোকানপাট, আবাসন, রিসোর্ট সবই গড়ে তুলছে।

সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী এসব পয়েন্টে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন। কিন্তু পুরো অঞ্চলজুড়ে নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। বর্জ্য সংগ্রহ বা নিয়মিত পরিষ্কারের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বোতল, পলিথিন, খাবারের প্যাকেট—সবই জমে থাকে বালুর ওপর।

পরিবেশকর্মী অশোক কুমার বড়ুয়াসহ অনেকে বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে—এটি একটি বিশাল ব্যর্থতা।

সৈকতে জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র নিয়েই সবকিছু হয়, কিন্তু নেই বাস্তব তদারকি। সৈকতের এই অগোছালো চিত্রের মূল কেন্দ্রে রয়েছে অনুমতিপত্র ব্যবস্থাপনা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকান ও কিটকিট চেয়ার-ছাতাসহ সব ব্যবসায়ীদের কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু তা দেওয়ার পর স্থাপনার নকশা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জায়গা দখল কোনো কিছুরই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নেই।

স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, সৈকত ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নীতিমালা না থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে বিশৃঙ্খলা।

কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের প্রত্যাশা সৌন্দর্য ফিরে পাক বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম বালিয়াড়ির সৈকত। পর্যটকরা বলছেন, সৈকতকে যদি সাজানো-গোছানো করা হয়, তবে কক্সবাজারের পর্যটন আয় আরও বহুগুণ বাড়বে।

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দাবি, কক্সবাজারের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে সমুদ্র সৈকত জোনে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, ব্যবসায়ীদের জন্য একই ডিজাইনের স্থাপনা, স্টল পুনর্বিন্যাস, ইসিএ এলাকায় দখল উচ্ছেদ এবং সৈকতজুড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদার করা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। যত্রতত্র স্থাপনা, কিটকিট চেয়ার ও পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না।

বালিয়াড়ি এলাকায় অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং সৈকত এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদারেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সৈকত নিশ্চিত করতেই আমাদের সব উদ্যোগ।

তিনি বলেন, সৈকতের স্বকীয়তা ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর সৈকত নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অনন্য। কিন্তু প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, দখল ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে এই সৌন্দর্য দ্রুত ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এখনই যদি দায়িত্বশীল তদারকি ও দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হয়, তবে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তার স্বকীয়তা হারাবে চিরতরে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!