প্রকৃতি প্রদত্ত বিলের জমিতে ধানের পাশাপাশি জলজ বিভিন্ন উদ্ভিদ ও ফুলের পাশাপাশি ফোটে লাল, সাদা ও হলুদ পদ্ম। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে বিলের এই পদ্ম দর্শনার্থীদের নজরে আসে ২০১৮ সালের বর্ষায়। পরের বছর স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা নানা রঙের পদ্মের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা জেলার গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশে জানাজানি হয়।
একসময় স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলেও এ নিয়ে প্রচারিত হয় প্রতিবেদন। হাজার মানুষের ঢল নামে বিলের সৌন্দর্য অবলোকনে। স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনও এগিয়ে আসে। গঠন করা হয় পদ্মবিল সংরক্ষণ কমিটি। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের লোকজন বিলের পদ্ম সংরক্ষণে নানাভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে।
২০২০ সালে বিল দেখতে আসেন বেঙ্গল প্লানেট রিচার্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক সিকদার এ কে সামসুদ্দিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বোটানি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখা হরি সরকার। তারা এই বিলের দুর্লভ প্রজাতির হলুদ পদ্মের মূল, কা-, শাখা ও ফুল গবেষণার জন্য ঢাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগসহ আমেরিকায় পাঠান।
২০২১ সালে বিলটির সার্বিক সহযোগিতায় ইউনেসকো এগিয়ে এলে বিলের প্রবেশপথসহ বেশ কয়টি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড, হলুদ পদ্মের বিশেষ বিশেষ জায়গাজুড়ে লাল পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। পাহারাদারের ব্যবস্থা হয়। দর্শনার্থীও বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক হারে। বিলে কমপক্ষে দুই ডজন খ-কালীন মাঝি নৌকার বিনিময়ে দর্শনার্থীদের কল্যাণে রুটি-রুজিতে নেমে পড়েন। এ সময় প্রশাসনের লোকজনও ঘন ঘন বিলে আসায় পরিবেশ রক্ষায় বাড়তি তোড়জোড় করতে দেখা গেছে। সে সময় কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পিকনিক স্টাইলে বিনোদন পেতে এই বিলের সৌন্দর্য অবলোকবন করেছে। বর্তমানে বিলটি অযতœ-অবহেলায় অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেখার যেন কেউ নেই।
কুমিল্লার সীমান্তবর্তী বুড়িচং উপজেলার জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পূর্ব পাশজুড়ে রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গ্রামে বিলটির অবস্থান। এর পূর্বে পা-ি, পশ্চিমে রাজাপুর, দক্ষিণে গাজীপুর ও উত্তরে দক্ষিণ গ্রাম। প্রায় ২৫ একর আয়তনের বিলটির পুরোটাই ব্যক্তিমালিকানাধীন। জমির মালিকরা এই বিলে ধানের পাশাপাশি বর্ষার অতিরিক্ত পানিতে মাছও চাষ করেন। শীত-পরবর্তী মৌসুমি বৃষ্টির শুরুতেই বিলে পদ্ম ফুল ফোটা শুরু হয়। বর্ষায় বৃষ্টির পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলের চারদিকে লাল, সাদা, হলুদ পদ্মের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে।
স্থানীয় দক্ষিণ গ্রামের ইব্রাহিম জানান, অনেক আগ থেকেই এই বিলে পদ্ম ফোটে। তবে ২০১৯ সালে বিলজুড়ে পদ্মের দেখা মেলে। এ সময় সারা দেশ থেকে দর্শনার্থীরা হলুদ পদ্ম দেখতে ছুটে আসেন। গঠন করা হয় স্থানীয় ১১ তরুণকে নিয়ে ‘পদ্ম বিল সংরক্ষণ কমিটি’, সিদ্ধান্ত হয় বিলের পদ্ম সংরক্ষণ, দর্শনার্থী বা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নৌকার ঘাট নির্ধারণ, নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে নৌকা নিয়ে বিল পরিদর্শন, বিলের জমি অধিগ্রহণ করার। এ নিয়ে সে সময় চার দফা বৈঠক করে ওই কমিটি। নৌকা নিয়ে চলাচলের কারণে বিলের ফুল নষ্ট হওয়ায় সরকারিভাবে নৌকার মাঝিদের নৌকা পরিচালনা বন্ধসহ সাহায্য-সহযোগিতাও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩-এর পর থেকে বিলটি আগের অবস্থানে ফিরে যায়। অধিগ্রহণের আশ্বাস কার্যকর না হওয়ায় জমির মালিকরা চাষাবাদসহ মাছ ধরা, বিল থেকে কচুরিপানা, শুষ্ক মৌসুমে ঘাস কাটাসহ অন্য কাজ চলতে থাকে। একসময় ইউনেসকোর ঝোলানো সাইনবোর্ড, লাল পতাকা, নির্দেশনা ইত্যাদি তুলে ফেলা হয়। অসচেতন দর্শনার্থীরা বিল পরিদর্শনে ঘিয়ে মাঝিদের সহযোগিতায় অর্থের বিনিময়ে হলুদসহ অন্যান্য পদ্ম ছিঁড়ে নেন। ফলশ্রুতিতে ২০২৩-পরবর্তী সময়ে বিলটি একেবারেই অভিভাবকশূন্য হয়ে আছে।
দক্ষিণ গ্রামের সমাজকর্মী নাসির উদ্দিন জানান, ২০১৯ সালে বিলের পদ্মের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার পর পত্রিকা, টিভি, অনলাইনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিলের ফুল নিয়ে গবেষণাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠান গবেষকরা।
এ বিষয়ে ঢাবি বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখা হরি সরকার বলেন, ‘পদ্ম বিলকে টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করছি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়েও একটা প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি, হলুদ পদ্ম টিকিয়ে রাখতে বিলটি সংরক্ষণসহ দর্শনার্থীদের যাতায়াত ও অন্যান্য সুবিধায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাব।’

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন