চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শৈলমারি গ্রামে বর্ষা মৌসুম এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় শতাধিক পরিবারের। কারণ, তারা মাছ ধরার জন্য প্রচলিত একটি লোকজ যন্ত্র- ‘বিত্তি’ তৈরির কাজে সম্পৃক্ত। এই কুটিরশিল্পই আজ তাদের সংসারে এনেছে আর্থিক সচ্ছলতা।
বিত্তি তৈরির প্রধান উপকরণ হলো বাঁশ, তাল গাছের আঁশ থেকে তৈরি সুতা এবং নাইলনের সুতা। তালগাছের ডগা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পচানোর পর সেই আঁশ দিয়ে সুতা তৈরি করা হয়। বাঁশ কেটে সাইজ অনুযায়ী কাঁটি তৈরি করা হয়। এরপর দক্ষ হাতে গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে তৈরি করেন মাছ ধরার বিত্তি।
গ্রামজুড়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিত্তি তৈরির ধুম পড়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে যখন খাল-বিল, নদী, ডোবা, পুকুর ও মাঠ পানিতে থৈ থৈ করে, তখন স্থানীয় জেলে ও গ্রামবাসীরা এই বিত্তি ব্যবহার করে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরেন- যেমন কাটরা, পুঁটি, চিংড়ি, টাকি, ঝাঁয়া, বাইন ইত্যাদি।
প্রতিটি বিত্তি স্থানীয় বাজারে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। শৈলমারির বিত্তি শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই নয়, বরং মেহেরপুর, যশোর, খুলনা জেলার বাজারেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে।
মেহেরপুর থেকে বিত্তি কিনতে আসা আব্দুল বারী জানান, ‘চুয়াডাঙ্গার বিত্তি অনেক ভালো মানের। দামও তুলনামূলকভাবে কম। আমি এখান থেকে ১৫টি বিত্তি কিনেছি, বাড়ির পাশের বিলে পাতব।’
বিত্তি তৈরির কারিগর আনারুল ইসলাম জানান, ‘এখন অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আগাম বৃষ্টির কারণে আষাঢ় মাস থেকেই চাহিদা বেড়েছে। একটি বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায়, আর তালগাছের ডগা ৩০ টাকায় কিনতে হয়। প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বিত্তি বিক্রি হয়।’
শৈলমারির নারী কারিগর মরজিনা খাতুন বলেন, ‘পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও কাজ করি। সপ্তাহে ৩-৪টি বিত্তি তৈরি করতে পারি। এই আয়ের ফলে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।’
আকন্দবাড়িয়া গ্রামের ক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, ‘বিলে মাছ ধরার জন্য ৭০০ টাকা দিয়ে দুটি বিত্তি কিনেছি। ছোট মাছ ধরার জন্য এটি খুব কার্যকর।’
বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এরিং বলেন, ‘এই কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হয়। কাজ না থাকলে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। এখন শৈলমারির বেশির ভাগ পরিবারই সচ্ছল।’
আপনার মতামত লিখুন :