বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. শাহ্ আলম মণ্ডল, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম

দৃষ্টি হারিয়েও হার মানেননি মাবুদ

মো. শাহ্ আলম মণ্ডল, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম

আব্দুল মাবুদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চলেছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আব্দুল মাবুদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চলেছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি মনোবল, যা হার মানায় শারীরিক অক্ষমতাকেও। সেই সত্যের জীবন্ত উদাহরণ দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি পৌরসভার ছোট ডাঙ্গাপাড়ার  অন্ধ আব্দুল মাবুদ। দু’চোখের দৃষ্টি হারালেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে।

৬৫ বছরের আব্দুল মাবুদ জন্ম থেকেই কম দেখতেন, এখন পুরোপুরি অন্ধ। স্ত্রীকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার। ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে নিজেরা না খেয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছেন। বিয়ের দায়িত্বও পালন করেছেন।

অথচ আজ সেই সন্তানই তাদের খোঁজ রাখে না। নেই কোনো দায়িত্ববোধ, নেই কোনো শ্রদ্ধা। সন্তান থাকা সত্ত্বেও বাবা-মাকে অসহায়ভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। এ যেন শুধু এক পরিবারের নয়, সমাজেরও গভীর ব্যর্থতা।

প্রতিদিন সকাল হলেই কাঁধে বাহক ঝুলিয়ে ৩০০-৪০০ টাকার বাদাম, বুট, কটকটি আর মিঠাই নিয়ে রাস্তায় বের হন তিনি। হিলি পৌর শহরের মাঠপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, চারমাথা, মহিলা কলেজ, চুড়িপট্টি—এসব এলাকায় ভাঙরির বিনিময়ে বিক্রি করেন খাবার। মানুষের দয়া নয়, নিজের পরিশ্রমেই সংসার চালান তিনি।

বলা হয়, অন্ধ মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে। মাবুদের ক্ষেত্রেও তাই। চোখে দেখতে না পেলেও মনের চোখ দিয়ে পথ চিনে নেন। কোথাও ভুল হলে আশপাশের মানুষকে অনুরোধ করে পথ জেনে নেন। মানুষও তাকে সাহায্য করে।

প্রায় প্রতিদিন দুপুরে হাকিমপুর থানার মসজিদে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় তাকে। নামাজের পর মসজিদের বারান্দায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এখানেই তাকে চিনেছেন অনেক মানবিক পুলিশ সদস্য, যারা প্রয়োজন হলে পাশে দাঁড়ান।

আব্দুল মাবুদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চলেছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সাউফুল ইসলাম, রাসেদুল ইসলাম, এনামুলসহ এলাকার কয়েকজন বলেন, প্রায়ই দেখি দু’জনকে বস্তা নিয়ে হাঁটতে। খুব কষ্ট লাগে। ছেলেমেয়ে থাকলে বাবা-মাকে এই বয়সে এভাবে ঘুরতে হয় কেন? তবু তারা কারও কাছে হাত পাতেন না। নিজেরা কষ্ট করে রোজগার করেন। মাবুদ চোখে দেখতে পান না, কিন্তু মনের চোখে পথ চলেন।

‘মানুষ ছেলেমেয়েদের কত আশা নিয়ে মানুষ করে। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু আমাদের কপালে কষ্টই লেখা। তাই এই বয়সেও স্বামীর সঙ্গে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে’—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন অন্ধ মাবুদের স্ত্রী।

অন্ধ আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘ছেলেটারে মানুষ করতে পারিনাই। নিজেরা না খাইয়া তারে খাইয়াছি। লেখাপড়া, বিয়া সব দিছি। এখন সে আমাদের চেনে না। খোঁজ নেয় না। কথা পর্যন্ত কয় না। কিন্তু বাঁচতে তো হইবো। তাই চোখে দেখি না তয় (তাবুও) ফেরি করি, গ্রামে-গ্রামে ঘুরি। যেটুকু কামাই হয়, তাই দিয়া কোনো রকম চলে। কষ্ট আছে, কিন্তু শান্তি আছে—কারো কাছে হাত পাতি না।’

হাকিমপুর (হিলি) থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, ‘প্রায়ই দেখি তিনি থানা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, পরে বারান্দায় বিশ্রাম নেন। একদিন তার জীবনের গল্প শুনে সত্যিই স্তব্ধ হয়ে যাই। অর্থের অভাবের চেয়েও বড় অভাব হচ্ছে সম্মান, ভালোবাসা ও যত্নের অভাব—যা এই মানুষটির জীবনে নেই। আমরা তাকে সাহায্য করেছি এবং যতটা পারি পাশে থাকব। সমাজের সবাইকেই এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’

সচেতন মহলের দাবি, সচ্ছল সন্তান থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বাবা-মাকে এভাবে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে দেখা—এ শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, পুরো সমাজের জন্য লজ্জাজনক।

সমাজে যতদিন সন্তানের দায়িত্বহীনতা আর মানুষের প্রতি অবহেলা থাকবে, ততদিন অন্ধ মাবুদের মতো মানুষেরা অন্ধকারেই পথ খুঁজে বেড়াবে বলেও মন্তব্য সচেতন মহলের।

Link copied!