ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হাসপাতালে চিকিৎসা নয়, টার্গেট রোগীর গহনা ও টাকা!

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও ধরা পড়া দুই নারী টানাবাজ চক্রের সদস্য। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সক্রিয় নারী টানাবাজ চক্র। এ চক্রের সদস্যরা চিকিৎসা নিতে নয়, বরং প্রতারণার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে আসে। তারা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে নিচ্ছে।

গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগ এলাকা থেকে চক্রের দুই নারী সদস্যকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তারা হলেন—ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকার মৃত মকবুল শেখের মেয়ে শিউলী খাতুন (৪০) ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ছাতেন গ্রামের সালাউদ্দিনের স্ত্রী শেফালী (৩৫)।

জানা গেছে, রোববার শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের মীর আব্দুল লতিফের ছেলে মোশারফ হোসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর ভিড়ের মধ্যে চক্রের সদস্য শিউলী খাতুন তার পকেট থেকে ৩,২২২ টাকা চুরি করার চেষ্টা করেন। এ সময় অন্য এক রোগী তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে শিউলীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এর আগে, গত ২৪ আগস্ট যশোর সদর উপজেলার আরবপুর গ্রামের আবু সিদ্দিকের মেয়ে নাসিমা খাতুন একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে চক্রের আরেক সদস্য শেফালী তার গলা থেকে সোনার চেইন ছিঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তার চিৎকারে আশপাশের রোগী ও স্বজনরা শেফালীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ ছাড়া, চুড়ামনকাটি গ্রামের সুলতান মীরের স্ত্রী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এলে চক্রের একজন নারী পূর্বপরিচিত সেজে সহায়তার নামে তার কানের দুল নিয়ে চম্পট দেয়।

সম্প্রতি, হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শাহনাজ নামের এক নারী হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তিনি জানান, তার সন্তানকে চিকিৎসা করাতে এসে বহির্বিভাগে ভিড়ের মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারী তার ব্যাগ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়।

সূত্র জানায়, যশোর জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি নারী টানাবাজ চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা রোগীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধান্দাবাজিতে লিপ্ত হয়। সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে তাদের গহনা, মোবাইল ফোন এবং পার্সে থাকা নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটির প্রধান কৌশল।

হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা জানান, গত কয়েক মাসে একাধিক রোগী এই চক্রের কবলে পড়ে মোবাইল, নগদ টাকা ও গহনা খুইয়েছেন। ইতিমধ্যে চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে এবং বহির্বিভাগ এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘হাসপাতালকে ঘিরে নারী টানাবাজ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। তারা সরল রোগীদের টার্গেট করে গহনা ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের হাত থেকে বাঁচতে রোগীদের সচেতন হওয়া জরুরি।’