যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি জোরালো হচ্ছে। যশোরের ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার মনোনয়নবঞ্চিতদের আহ্বানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে সাবিরা নাজমুল মুন্নীকে সরিয়ে পুরুষ প্রার্থী বিবেচনার জোর দাবি জানানো হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এই আসনে নারী প্রার্থী পরিবর্তন করে একজন পুরুষ প্রার্থী দিতে হবে।
এই আসনের পুরুষ প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের এলাকায় ধার্মিক মানুষের সংখ্যা বেশি। তারা নারী প্রার্থীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। এ কারণে একজন পুরুষ প্রার্থী দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া একজন নারী এবং তিনি কয়েক দফা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছেন। নারী ইস্যুতে অযথা মন্তব্য করা দলকেই হেয় করার শামিল।’
যদিও দুই উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন সমাবেশ থেকে নারী প্রার্থীকে প্রত্যাহারের দাবি জোরালো হচ্ছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও চারদলীয় জোট প্রার্থীর দখলে ছিল। এ কারণে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কখনো বিএনপি এমপির সেবা পাননি। ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পর ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রতিজ্ঞা রয়েছে সবার মধ্যে।
তারা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে সাবিরা সুলতানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই উপজেলায় মাঠ জরিপ, ভোটের হিসাব, জনপ্রিয়তা এবং সাধারণ ভোটারদের মত, এসব বিবেচনায় জামায়াতের শক্ত প্রার্থীর বিপরীতে ধানের শীষের বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ঘোষিত প্রার্থীর কম জনপ্রিয়তা, উগ্র আচরণ, তৃণমূলের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্ক—এসব কারণে হতাশা তৈরি হয়েছে। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় জামায়াতের প্রার্থী উচ্ছ্বসিত। তার মাধ্যমে আসনটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে। তাই পুরুষ প্রার্থী দেওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে।
এদিকে, তারুণ্যের সমাবেশ ও বিভিন্ন জনসমাবেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, দল চূড়ান্তভাবে সাবিরা সুলতানাকে প্রার্থী করলেও তারা ধানের শীষের পক্ষেই থাকবেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ধানের শীষের পক্ষে। তবে দীর্ঘদিন চৌগাছা থেকে কেউ মনোনয়ন পায়নি। এখানে সব মানুষ স্থানীয় কাউকেই প্রার্থী হিসেবে চান। ঝিকরগাছা-চৌগাছার ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন আমি পাচ্ছি। ৪৭ বছরের রাজনীতিতে আমি এই আসনের প্রতিটি ভোটার ও কর্মীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, তাই সবাই আমাকে পেতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝিকরগাছা-চৌগাছার মানুষ ধার্মিক। জামায়াতের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপরীতে নারী প্রার্থীকে অনেকেই ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তাই দলের স্বার্থেই পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা হাইকমান্ডকে নিয়মিত জানাচ্ছি। আশা করি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘নারী প্রার্থী পরিবর্তনের কথা আমি ব্যক্তিগতভাবে বলিনি। প্রার্থী ঘোষণার আগেই তারেক রহমান আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় মাঠে আছি। যেহেতু প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত নয়, তাই আশা করছি দল সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে।’
অন্যদিকে, সাবিরা সুলতানা মুন্নী বলেন, ‘এ আসনে ৫ লাখের বেশি ভোটার, যার প্রায় অর্ধেক নারী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নারীদের ভোট নিয়ে যে শঙ্কা করেছিলেন—আমি প্রার্থী হওয়ায় তা আরও বেড়েছে। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক বা পথসভা—সব জায়গায় নারী ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আমাদের আশাবাদী করছে। নির্বাচিত হলে তারা সহজেই আমার কাছে পৌঁছাতে পারবেন, যা অন্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে কঠিন।’
দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘মহাসচিব প্রার্থী ঘোষণার সময় যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন, তার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা নেতাদের প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক। এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে থাকতে বলা হয়েছে। যারা অপেক্ষায় আছেন, তারাও ধানের শীষের পক্ষে আছেন। চলতি মাসেই সব চূড়ান্ত হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারা দেশের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ওইদিন যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে সাবিরা সুলতানার নাম ঘোষণা করা হয়।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন