খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সেখ নবীর হোসেনের বিরুদ্ধে মৃত্যু সনদে জালিয়াতি, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সচিবের সহযোগিতায় কম্পিউটার অপারেটর মুকুল, গ্রাম পুলিশ নুর আলম, জয়নাল আবেদীন ও সাখাওয়াত শেখের মাধ্যমে জাল মৃত্যু সনদ তৈরি করে প্রতারণা করা হয়েছে।
সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘাটভোগ ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের মুজিবর শেখের ছেলে মুরসালিন ও তার মা জোসনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে আছেন। মুরসালিনের দাদি জীবদ্দশায় ছেলে মুজিবর শেখের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ১২.৭৯ শতক জমি দানপত্র দলিল করে দেন। তবে পরবর্তীতে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঐ জমি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে মুরসালিনের পরিবারের দাবি, তাদের প্রতিপক্ষ জয়নাল আবেদীন ও সাখাওয়াত শেখের সহায়তায় ঘাটভোগ ইউপি সচিব নবীর হোসেনের মাধ্যমে তাদের দাদির নামে জাল মৃত্যু সনদ তৈরি করে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে তারা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখেন, মৃত্যু সনদের ভলিউম বইতে কাটাকাটি করা হয়েছে এবং আবেদন ও ইস্যুর তারিখে গড়মিল রয়েছে।
ভুক্তভোগী মুজিবর রহমান জানান, তার মাতা মারা যাওয়ার আগে জমিটি তাকে দানপত্র দলিল করে দেন। কিন্তু ইউপি সচিব নবীর হোসেন উদ্যোক্তা মুকুল ও গ্রাম পুলিশদের সহায়তায় প্রতারণার মাধ্যমে তাদের জমি দখলের চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় তিনি ৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রথমে জাল ডিজিটাল সনদের আবেদন তারিখ দেখানো হয় গত ২২ জুন, কিন্তু ইস্যুর তারিখ ৭ মে—অর্থাৎ আবেদন করার আগেই সনদ ইস্যু করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার ভলিউম বই কেটে মৃত্যু তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে মৃত্যু সনদে চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বার উভয়েই বলেছেন, মৃত্যু সনদে তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
ঘাটভোগ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম নন্দু বলেন, ‘আলাইপুর গ্রামের জমিটি মুরসালিনের পিতা মুজিবর শেখেরই পাওয়ার কথা। বিষয়টি আমরা জানি। ১২ নভেম্বর শালিসী বৈঠকে সমস্যার সমাধান করা হবে।’ তিনি আরও জানান, মৃত্যু সনদে চেয়ারম্যান ও মেম্বার কেউ স্বাক্ষর দেননি।
ঘাটভোগ ইউনিয়ন সচিব সেখ নবীর হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদে যোগদানের পর থেকেই সচিব নবীর হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত থাকাকালে দায়িত্ব পালনের সময় তৎকালীন চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
বর্তমানে জাল মৃত্যু সনদ সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন।

-20251106230737.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন