ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

গরমে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ, কোরবানির হাটে সংক্রমণের ঝুঁকি

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত গরু। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গবাদিপশুর ভয়াবহ ভাইরাসজনিত রোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ আবারও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলাসহ সারা দেশে।

গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সামনে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটগুলোতে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোরবানির পশুর হাটে গরু বেচাকেনার সময় গবাদিপশুদের মধ্যে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তারা আক্রান্ত গরু হাটে না আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

হোসেনপুর উপজেলার হোসেনপুর, পিতলগঞ্জ, চরপুমদী ও সুরাটীসহ ১০টিরও বেশি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটে প্রতিদিন প্রচুর গরু ক্রয়-বিক্রয় হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু গরু এর মধ্যেই এলএসডি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এটি গরুর জন্য একটি ভয়ংকর চর্মরোগ, যা খামারের আর্থিক ক্ষতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, ভ্যাকসিন ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।

প্রথমবার এই রোগের সন্ধান মেলে ১৯২৯ সালে আফ্রিকার জাম্বিয়াতে। বাংলাদেশে এটি প্রথম দেখা যায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। পরবর্তী সময়ে দেশের আরও ১২ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এই রোগের লক্ষণ শনাক্ত করা হয়।

এলএসডি রোগের লক্ষণ

১. প্রথমে গরুর জ্বর আসে, খাওয়ার রুচি কমে যায়।

২. নাক ও মুখ দিয়ে লালা বের হয়।

৩. পা ফুলে যায় ও পায়ের মাঝে পানি জমে।

৪. শরীরজুড়ে গুটি বা ক্ষত তৈরি হয়।

৫. লোম উঠে যায় ও ক্ষত ছড়িয়ে পড়ে।

৬. পানি পানে অনীহা তৈরি হয়।

এই ভাইরাস মশা, মাছি, অন্যান্য কীটপতঙ্গ, আক্রান্ত গরুর লালা এবং খামারের পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। অনেক সময় একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করে একাধিক গরু-ছাগলকে ইনজেকশন দিলে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এমনকি আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহারেও রোগ ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়

১. খামারের আশপাশ পরিষ্কার রাখা।

২. মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করা।

৩. আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখা।

৪. মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা।

৫. আক্রান্ত গাভির দুধ বাছুরকে না খাওয়ানো।

৬.  আক্রান্ত গরুর ব্যবহৃত জিনিস সুস্থ গরু থেকে দূরে রাখা

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সচেতনতা। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই নিকটস্থ প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রদান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর পরিচর্যা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই লাম্পি স্কিন ডিজিজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোরবানির ঈদের আগেই সব গরু খামারে পরীক্ষা করে দেখা উচিত, যাতে হাটে স্বাস্থ্যবান গরু ওঠে এবং সাধারণ মানুষ ও খামারিরা ঝুঁকি এড়িয়ে কোরবানির আয়োজন সম্পন্ন করতে পারেন।’