ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫

ধূমপান করতে নিষেধ করায় দোকানে ভাঙচুর-লুটপাট, ভিডিও ভাইরাল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়ে একটি কেকের দোকানে ভাঙচু করে কয়েকজন যুবক। ছবি-সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কেকের দোকানের মধ্যে ধূমপান করতে নিষেধ করায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটানায় দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মারধর করে আহত করা হয়েছে। 

ঘটনার সময় হামলাকারী যুবকদের গুলিতে নির্ঝর নামে এক সেলসম্যান আহত হন। তারা নগদ অর্থ লুট করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

গত ২৮ মে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২৯ মে ‘কেকস কিং ও অনিক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারি’র মালিক ভুক্তভোগী অনিক বাদী হয়ে ৮ জনের নামে ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করেন। 

এ মামলায় ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে পুলিশের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বাদী অনিকুর রহমান অনিক ভেড়ামারা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ফারাকপুর গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে। কেকস কিং ও অনিক বেকারী অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক।

আসামিরা হলেন- ভেড়ামারার নওদাপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর ছেলে মিথুন সাকিব সাদু (২২), ফারাকপুর এলাকার ফারুক আলীর ছেলে ওসামা (২০), নওদাপাড়া এলাকার রশিদের ছেলে ফারুক (৪৮), একই এলাকার মৃত আব্দুল্লাহ আলীর ছেলে নিলয় (২৩), রবিন (২৩), বজু শেখের ছেলে রাব্বী শেখ (৩০), ইয়াকুব ঘটকের ছেলে রিমন (২৩) ও মির্জাপুর এলাকার শিহাব ফকিরের ছেলে রকি (২২)। 

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ‘গত বুধবার (২৮ মে) দুপুরে ভেড়ামারা বাজারে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেকস কিং নামক দোকানের মধ্যে এসে আসামি মিথুন সাকিব ও ওসামাসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন আসামি দোকানের অন্যান্য ক্রেতার সামনে ধূমপান করে। তখন দোকানের দায়িত্বে থাকা আমার স্ত্রীর বড়ভাই মো. ওয়াসিম আকরাম নির্ঝর (২৮) তাদের দোকানে ধূমপান করতে নিষেধ করেন।’

‘এ সময় আসামিরা সেলসম্যান নির্ঝরকে মারতে তেড়ে আসে। একপর্যায়ে সে তাদের প্রতিহত করতে গেলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর ও নষ্ট করে। এতে আনুমানিক দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়। তারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়।’ 

‘পরবর্তীকালে দুপুর দেড়টার দিকে আমার অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনিক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারিতে আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো রামদা, হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, লোহার পাইপ, লোহার রড, হাতুড়ি, হকিস্টিক, কাঠের বাটাম ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা শুরু করে।’

‘দোকানে বসে থাকা আমার বাবা মো. মাসুদুর রহমানকে (৬০) চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় প্রাণে মেরে ফেলার জন্য ৬ নম্বর আসামি মো. রাব্বী শেখ তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করতে গেলে আমার বাবা প্রাণ বাঁচাতে ডান হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলে লোহার রডের আঘাতে তার কব্জির ওপরে লেগে হাড় ভেঙে যায়।’

বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘এ সময় দুই নম্বর আসামি ওসামা দোকানের ক্যাশের ড্রয়ারে থাকা নগদ ১২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে আসামিরা তাদের হাতে থাকা লোহার পাইপ, রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের কেকের ৩টি ফ্রিজ, আইসক্রিমের ২টি ডিপ ফ্রিজ, ইলেকট্রিক ওভেন, সিসি ক্যামেরা, মনিটরসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।’

‘এতে আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। পুনরায় একই তারিখ দুপুর অনুমান ৩টার দিকে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেকস কিং নামক দোকানে এসে তিন নম্বর আসামি মো. ফারুক তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রীর বড়ভাই ও সেলসম্যান মো. ওয়াসিম আকরাম নির্ঝরকে গুলি করলে গুলিটি তার পায়ে লেগে সে আহত হয়। এ সময় আসামিরা দোকানের অন্যান্য কর্মচারীদের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মেরে জখম করে।’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অনিক বলেন, ‘কেকের দোকানের মধ্যে ক্রেতাদের সামনে ধূমপান করছিল আসামিরা। তাদের ধূমপান করতে নিষেধ করায় দফায় দফায় আমার দুটি দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা দোকানের কর্মচারীদের মারধর করে আহত করে। তাদের গুলিতে নির্ঝর আহত হয়। তাদের হামলায় অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ভেড়ামারা থানার ওসি (তদন্ত) রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’