টাকার অভাবে স্বামীর কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে পারছেন না স্ত্রী সোহাগী। নিজের কিডনি দিতে প্রস্তুত হয়েও চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে না পারায় রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামের সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই গার্মেন্টস দম্পতি।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম কাদমা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী সোহাগী দুজনেই গাজীপুরের সফিপুরে অবস্থিত একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ভালোবেসে বিয়ে করা এই দম্পতির সংসার চলছিল স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু ২০১৯ সালে সাদ্দামের দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেলে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
ছেলেকে বাঁচাতে তার মা সামসুন্নাহার বেগম নিজের একটি কিডনি দান করেন। ছয় বছর সেই কিডনি নিয়ে বেঁচে ছিলেন সাদ্দাম। কিন্তু সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, সেই কিডনিটিও ড্যামেজ হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় আবারও কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া বাঁচার উপায় নেই সাদ্দামের। এবার কিডনি দিতে এগিয়ে এসেছেন তার স্ত্রী সোহাগী নিজেই। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। যা এই দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে বহন করা একেবারেই অসম্ভব।
সাদ্দাম বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
তার চিকিৎসক ডা. সাকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে সাদ্দামকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
সাদ্দামের স্ত্রী সোহাগী বলেন, আমার স্বামীকে বাঁচাতে আমি নিজের কিডনি দিতে রাজি। আমি চাই আমার সন্তান যেন তার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারে। এর আগে একটি সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। সেই কষ্ট এখনো ভুলিনি।
সাদ্দামের মা বলেন, ছেলেকে বাঁচাতে আমি আমার কিডনি দিয়েছিলাম। এখন আবার ছেলের জীবন ঝুঁকিতে। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আমরা সমাজের কাছে হাত পেতেছি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, অসুস্থ সাদ্দাম হোসেনের কথা শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
স্থানীয় গাওচুলকা আনছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপারেনটেন্ডেন্ট মাওলানা নুরুননবী বলেন, সাদ্দাম একজন অসহায় মানুষ। সমাজের বিত্তবানদের তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।
বর্তমানে সাদ্দামের একমাত্র সম্বল তার পরিবারের ভালোবাসা ও সমাজের সহানুভূতি। এখন দেশ-বিদেশের দানশীল মানুষের দিকে তাকিয়ে আছেন এই পরিবারটি।