ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

লালমনিরহাটে কমছে তিস্তার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম
তিস্তার পানি কমলেও লালমনিরহাটে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ।

ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির কারণে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। তবে পানি কমলেও লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছে।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৬টায় হাতীবান্ধা তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়। দুপুরে তা ২৪ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষেত থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বানভাসিদের জীবন স্বাভাবিক হওয়ার পথে।

তবে নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে মাছ চাষের ঘের, সংকটে পড়েছে গবাদিপশুর খাবার।

গত ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ৩০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

বন্যা সতর্কতা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে, আর ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানিবন্দি মানুষদের দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। কেউ উঁচু বাঁধে বা রাস্তার ধারে পলিথিন টেনে গবাদিপশু রেখেছেন, কেউ ঘরের মধ্যে মাচাং তুলে রান্না করছেন, কেউ বাঁধের ধারে চুলা বসিয়ে খাবার রান্না করছেন। পাশাপাশি সাপ-পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পানি কমা-বাড়ার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, চাষাবাদ নষ্ট হয়েছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদিপশু উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। রাস্তাঘাট, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ‘তিন দিন ধরে চরাঞ্চলের সব বাড়ি পানিবন্দি। শুকনো জমি নেই, গরু-ছাগল রাখার জায়গাও পাচ্ছি না।’

একই গ্রামের কাচুয়া শেখ বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে ঠিকমতো রান্না হয়নি। গরু-ছাগল ও পরিবারকে উঁচু জায়গায় রেখেছি। আমরা চাই ভারত থেকে যেন আর পানি না আসে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, ‘নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে, তবে নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। কোথাও পানি কমায় ভাঙন দেখা দিলে দ্রুত সমাধান করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ‘পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।’