বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাট। এ জেলার মাটি উর্বর ও বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। এ জেলার কৃষকদের মধ্যে আখ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আখ থেকে গুড়, চিনি ও আখের রস উৎপাদন হওয়ায় এটি শুধু কৃষকদের জীবিকা নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতিরও অন্যতম ভরসা।
আখ চাষে দ্বিগুণ লাভবান হওয়ায় দিন দিন আখ চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভাল দামও পাচ্ছেন চাষিরা। আখ চাষ করে উৎপাদন ব্যয় উঠিয়ে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় চাষিদের মুখে হাঁসি ফুটেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, আখ চাষিদের সংখ্যা বাড়াতে সরকারি প্রকল্প ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, অন্যান্য জেলার তুলনায় লালমনিহাটের আখ চাষের সংখ্যা খুবই কম ছিল। কয়েক বছর থেকে আখ চাষ করে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকরা আখ চাষের দিকে ঝুঁকছে। উচু জমি ও বেলে-দোয়াশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী।
এদিকে লালমনিহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী এলাকার আখ চাষি আব্দুল মান্নান দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন আখ চাষ। গত বছর দুই বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকা আখ বিক্রি করেন এতে দ্বিগুণ লাভবান হন। চলতি বছরেও তার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। তার আখ খেতে বিভিন্ন জাতের আখ রয়েছে। বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রতি পিস আখ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। চিবিয়ে খাওয়া ও গুর তৈরীর জন্য জনপ্রিয় এই আখ।
অপর কৃষক আবেদ আলী (৭০) যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আখ চাষ করে আসছেন।
তিনি বলেন, আমরা বংশীয়ভাবে আখ চাষ করে আসছি। এখনো আমরা নিয়মিতভাবে আখ চাষ করি। সরকার যদি সত্যিই চিনি মিলগুলো চালু করে, তাহলে এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হবে।
কৃষকরা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশি দাম পাওয়ায় খুশি হয়েছেন চাষিরা।
লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ মৌসুমে লালমনিহাটের পাঁচ উপজেলায় ৭ শত হেক্টর জমিতে আখ চাষাবাদ হয়েছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার হেক্টর জমি।
হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিসার শামীমা ইয়াসমিন বলেন, আখ একটি অর্থকরী ফসল। দিন দিন আখ চাষ হারিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু গত দুই বছর থেকে আখ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লালমনিহাটের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আছ চাষ হচ্ছে। চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সঠিক প্রযুক্তি, সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও বাজারজাতকরণ সুবিধা পেলে আখ চাষ আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।