আওয়ামী লীগ এখন একটি গুন্ডা-মাস্তান পার্টিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, ‘আর তাদের নেত্রী ছিল গুন্ডাদের হেডকোয়ার্টার। ৭৭ বছরের গুন্ডি এখন দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে।’
বুধবার (৬ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের এসআর প্লাজার সামনে জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ও ছাত্র-জনতার বিজয় উৎসবের’ শোভাযাত্রা শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এম নাসের রহমান বলেছেন, ‘একটা বছর দেখতে দেখতে এই স্বৈরাচারী হাসিনার এক বছর পলায়নের দিন উদযাপন করছি আমরা। তার সাড়ে পনেরো বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত হয়েছে একটি দল, সেটি হলো—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই শেখ হাসিনা কম চেষ্টা করেনি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম, খুন-হত্যা করা হয়েছে, জেলে ভরা হয়েছে। আল্লাহর বিচার—আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই করে দিয়েছেন তাকে।’
নাসের রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতা এবং পেছনে বিএনপির সক্রিয় ভূমিকায় এই স্বৈরাচারিণীকে আমরা বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে সে পালিয়ে গেছে। যে দেশ থেকে এসেছিল, সেই দেশই তাকে ফেরত পাঠিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কিছুই না, সে ভারতের দালাল, ভারতের চর। ভারতের দালাল হিসেবে সাড়ে পনেরো বছর এ দেশে রামরাজত্ব কায়েম করেছিল সে। এ ধরনের রামরাজত্বের সুযোগ শেখ হাসিনা তো দূরের কথা, তার প্রেতাত্মাদেরও কোনোদিন দেওয়া হবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ইনশাআল্লাহ আমরা ধীরে ধীরে শেষ করে দেব। কারণ, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে—আওয়ামী লীগ একটা গুন্ডা পার্টি, মাস্তান পার্টি। দেশের জনগণ সেটা বুঝেছে। কীভাবে বুঝেছে? চৌদ্দ শ মানুষ মরার পর আর বিশ হাজার মানুষ আহত হওয়ার পর এ দেশের মানুষ বুঝেছে আওয়ামী লীগ একটি গুন্ডা-মাস্তান পার্টি।’
-20250806153743.jpg)
তিনি আরও বলেন, ‘আর তাদের নেত্রী ছিল গুন্ডাদের হেডকোয়ার্টার। ৭৭ বছরের গুন্ডি এখন দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। আজকে সে দিল্লিতে কোথায় লুকিয়ে আছে? এই আওয়ামী লীগাররা মুখ দেখাবে কেমন করে? তারা যখন গর্ত থেকে বের হবে তখন তাদের চেহারা দেখাবে কী করে?’
নাসের রহমান বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের মৌলভীবাজারের এই চার খলিফা কোথায়? নিজেরা বসে বসে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছে। যার যা ইচ্ছা, নিজে নিজে হয়ে গেছে। কারণ দেশটাকে তারা তাদের বাপের সম্পত্তি মনে করেছিল। কিন্তু দেশের মালিক তারা না, বাংলাদেশের জনগণ—এটা জনগণ গত বছর বুঝিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বর্ষপূর্তিতে স্বৈরাচারিণীকে সরানোর জন্য যে চৌদ্দ শ মানুষ শহীদ হয়েছে, তার মধ্যে ১৩৩টি শিশুবাচ্চা ছিল এবং বিশ থেকে পঁচিশ হাজার মানুষ আহত হয়েছে, কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে গেছে—তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, সমবেদনা এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের নেতা তারেক রহমান বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের আরও বেশি সহায়তা করা হবে।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আলহাজ্ব আব্দুল মুকিতসহ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
আনন্দ শোভাযাত্রার আগে বিকেল ৩টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টির মাঝেও খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে জেলার ৭টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা, জেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাদের ব্যানার, ফেস্টুনসহ অংশ নেন।
শোভাযাত্রার অগ্রভাগে বেশ কয়েকটি ভ্যানগাড়িতে সাজিয়ে নজরকাড়া শোভা পায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং এম নাসের রহমানের ছবি সম্বলিত বিশাল বিলবোর্ড। এ ছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের দৃষ্টি কাড়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ৬ কোমলমতি শিশু—আব্দুল আহাদ, সাফফাত সামির, রিয়া গোপ, জাবির ইব্রাহিম, রাকিব হাসান ও হোসেন মিয়া—এর ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড।
আনন্দ শোভাযাত্রাকে ঘিরে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে, যা বিগত দেড় দশকে বিরল দৃশ্য।
আপনার মতামত লিখুন :