ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত গজারিয়ার নুরুজ্জামান

গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
মো. নুরুজ্জামান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টেংগারচরের সন্তান মো. নুরুজ্জামান ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় ইতিহাস বিষয় থেকে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রতিকূলতা আর সীমিত সুযোগ-সুবিধার মাঝেও নিজের কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তিনি এই সাফল্য অর্জন করেছেন।

নুরুজ্জামান টেংগারচর ইউনিয়নের টেংগারচর গ্রামের মো. রুহুল আমিন মোল্লার বড় ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের প্রতি তার ছিল গভীর আগ্রহ।

২০১২ সালে হোসেন্দী দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে তিনি শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেন। এরপর ২০১৫ সালে বন্দর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন।

সাধারণত গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার পথ সহজ নয়। তবু পরিবার ও নিজের চেষ্টা-পরিশ্রমে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান এবং সেখান থেকেই ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

শুধু পড়াশোনাতেই নয়, চাকরি ক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে তিনি এগিয়েছেন। প্রথমে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর জনতা ব্যাংকে অফিসার পদে এবং পরে অগ্রণী ব্যাংকেও অফিসার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তবে তার লক্ষ্য ছিল আরও বড় কিছু। সেই লক্ষ্যেই তিনি প্রস্তুতি চালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুযোগ পেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন।

নিজের সাফল্যের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। জীবন কখনো সহজ ছিল না। তবু হার মানিনি। বাবা-মায়ের উৎসাহ, শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা আর নিজের অটুট মনোবলই আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু আমার একার নয়, পুরো গজারিয়া এবং গ্রামের সকল শিক্ষার্থীর জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা। আমি চাই, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও যেন বুঝতে পারে, ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো কিছু সম্ভব।’

নুরুজ্জামানের এই সাফল্যে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। গ্রামের অনেকে তাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রোল মডেল হিসেবে দেখছেন।

প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা এই শিক্ষকের দৃঢ়তা ও কঠোর পরিশ্রম আজ প্রমাণ করেছে—সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না।