ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ছুটি শেষে প্রবাসে গিয়ে ১৮ দিনের মাথায় মৃত্যু, কফিনে ফিরলেন মানিক

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০৯:০৪ এএম
লাশ বহনকারি কফিন ও ইনসেটে মানিক। ছবি- সংগৃহীত

দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, আর কোলে বসে থাকা চার বছরের একমাত্র কন্যা জান্নাতুল মাওয়া-বাড়ির আঙিনা লোকজনে ভরপুর, সবার চোখে অশ্রু। কেউ ভাবতেও পারেননি, হাসিমুখে প্রবাসে যাওয়া মানুষটি দেশে ফিরবেন কফিনবন্দি হয়ে।

ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে ফিরে যাওয়ার মাত্র ১৮ দিনের মাথায় কর্মস্থলে স্ট্রোক করে মারা গেছেন নোয়াখালীর শফিকুল ইসলাম মানিক (৪০)।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তার মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রিয় মানুষটির শেষবারের মতো মুখ দেখার জন্য ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও শত শত স্থানীয় মানুষ।

শফিকুল ইসলাম মানিক চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বানসা গ্রামের পোদ্দার বাড়ির মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই মাসের ছুটি শেষে গত ৪ নভেম্বর আবুধাবিতে নিজ কর্মস্থলে ফেরেন মানিক। এরপর ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার দিকে কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ স্ট্রোক করলে সহকর্মীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বানসা মধ্যপাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদের সামনে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নিতে দূরদূরান্ত থেকে শত শত মানুষ উপস্থিত হন।

মানিকের ছোট ভাই প্রবাসী জাবেদ হোসেন বলেন, আমার ভাই প্রায় ১৭ বছর ধরে প্রবাসে ছিলেন। সংসারের সব দায়িত্ব তিনিই বহন করতেন। আবুধাবিতে তিনি বলদিয়ার কাজ করতেন। তাকে হারিয়ে আমাদের জীবন অন্ধকার হয়ে গেছে।

জানাজার ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আফসার বলেন, মানিক ভাইয়ের স্ত্রী বর্তমানে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চার বছরের সন্তানটি বাবার লাশ দেখে কান্না থামাতে পারছে না। স্ত্রী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। ভাগ্য বদলানোর আশায় দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন তিনি-কিন্তু শেষ পর্যন্ত কফিনবন্দি হয়েই দেশে ফিরলেন।

আত্মীয় শিপন ইকবাল বলেন, মানিক ভাই অত্যন্ত ভদ্র ও হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। দেখা হলেই হাসিমুখে কথা বলতেন। তার মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় প্রবাসে গিয়ে এমন একটি আকস্মিক মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পুরো এলাকায় গভীর শোকের আবহ বিরাজ করছে।