ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ পরিবহনে নিরাপত্তা বিধি মানতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে গজারিয়ার সিঁকিরগাঁও এলাকার সামুদা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় স্থানীয়দের জীবন ও স্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে পড়ছে।
সোমবার (২৩ আগস্ট) ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডবাহী একটি ট্রাকের ট্যাংক ফেটে রাস্তার ওপর ছড়িয়ে পড়ে রাসায়নিক পদার্থ। মুহূর্তের মধ্যে বাতাসে মিশে যায় তীব্র ধোঁয়া। এতে পথচারী, দোকানদার, স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ অনেকেই চোখ-মুখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে বাধ্য হন।
গত এক বছরে এ ধরনের অন্তত তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছর একই এলাকায় ট্রাক থেকে তরল রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ বছরের মে মাসে হোসেন্দি ইউনিয়নের জামালদি স্ট্যান্ড এলাকায় ছড়িয়ে পড়া রাসায়নিকের ধোঁয়ায় যাত্রীসহ শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানির গাড়ির সঙ্গে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেও কার্যকর সমাধান মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘বারবার রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ছে। আমার ছোট সন্তান বমি করেছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।’
শিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, ‘ধোঁয়ার কারণে চোখে পানি আসায় কিছুই দেখতে পাইনি। এটি বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’
রিকশাচালক রফিক মিয়ার প্রশ্ন, ‘আমরা অসুস্থ হলে চিকিৎসার খরচ দেবে কে? কোম্পানির অবহেলায় সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।’
চিকিৎসক ও স্থানীয়দের মতে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও অন্যান্য রাসায়নিক বারবার বাতাসে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এর ফলে হাঁপানি, ত্বকের সমস্যা, চোখের স্থায়ী ক্ষতি এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘কোম্পানির কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়টি যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে কোম্পানির মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাফিজ দুর্ঘটনার জন্য রাস্তার খারাপ অবস্থা দায়ী করেন। আর লজিস্টিক ম্যানেজার শহিদুল্লাহ দাবি করেন, ‘আজকের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবিষ্যতে পরিবহনে আরও সতর্ক হবো।’
গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কমান্ডার মো. ফিরোজ আলম জানান, ‘তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাসায়নিক পরিষ্কার করেছেন।’
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কেউ অভিযোগ না করলেও এটি পরিবেশ দূষণ। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উত্তপ্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিবহনে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান কঠোরভাবে মেনে চলা বাধ্যতামূলক। সামুদা কেমিক্যাল কোম্পানি এ নিয়ম লঙ্ঘন করছে কিনা, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।’