ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

নওগাঁয় ধানক্ষেতে আগাছানাশক স্প্রে, ক্ষতি ৩ লক্ষাধিক টাকা

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম
নওগাঁর পোরশায় ১০ বিঘা জমির স্বর্ণা-৫ জাতের ধান এক রাতেই ধ্বংস। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নওগাঁর পোরশায় আমন ধানের জমিতে আগাছানাশক স্প্রে করে ধানগাছ বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। রোববার (২৪ আগস্ট) রাতের কোনো একসময় উপজেলার খরপা গ্রামের মাঠে স্বর্ণা-৫ জাতের ধানে কীটনাশক ও আগাছানাশক স্প্রে করা হয়। এতে সাতজন কৃষকের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আবু সাঈদ নামে এক ভুক্তভোগী কৃষক।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর ধরে উপজেলার খরপা গ্রামের জামাল, সায়েম, কালাম, সালাম ও আবু সাঈদসহ সাতজন কৃষক ও তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে মাঠে ১০ বিঘা জমি চাষ করে আসছেন। এ বছরও ওইসব জমিতে আমন মৌসুমে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান রোপণ করা হয়। ধান কাটা পর্যন্ত আর দেড়-দুই মাস বাকি ছিল। কিন্তু তার আগেই গত রোববার রাতে প্রতিপক্ষরা পুরো জমিতে ধানে আগাছানাশক স্প্রে করে ফসল পুড়িয়ে দেয়। এতে জমির সব ধানের গাছ শুকিয়ে যায় এবং কৃষকরা চরম হতাশায় পড়েছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় আব্দুল মান্নান চৌধুরী, আব্দুল লতিফ ও ইসমাঈল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক সেকেন্দার বলেন, ‘সোমবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখি- কোথাও ধানের গাছ সবুজ, আবার কোথাও পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। বেলা যত গড়াচ্ছে, ধানের গাছ ততই শুকিয়ে যাচ্ছে। দিনশেষে প্রায় সব গাছ শুকিয়ে মরে যায়।’

আরেক কৃষক কালাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমি আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা। আর দেড় মাস পরেই ধান ঘরে তোলার কথা ছিল। বিঘাপ্রতি ২০-২২ মণ ফলন হতো। এখন ধানের বাজার দরও ভালো- প্রতি মণ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। কিন্তু এখন আর সেই ধান ঘরে উঠবে না।’

অভিযোগকারী কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে ওই জমিতে চাষ করে আসছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ রাতে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনকে সঙ্গে নিয়ে ধানে আগাছানাশক স্প্রে করে ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এতে আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জমিটি আমাদের চাচাতো ভাইদের, যারা নওগাঁ শহরে বসবাস করেন এবং জমি দেখভাল করেন। যারা অভিযোগ করেছে, তারাই জোরপূর্বক জমি দখল করে চাষ করেছে এবং আমাদের বর্গাদারদের মারধর করেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। ফসল নষ্ট করার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

উপজেলার মর্সিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘জমিতে আগাছানাশক স্প্রে করা হয়েছে, ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছে অধিক পরিমাণ পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিঘাপ্রতি ২০-২২ মণ ফলন হতো, সেখানে এখন ৫-৭ মণ হতে পারে। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু ফসল নষ্ট করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’

পোরশা থানার ওসি মিন্টু রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে থানায় অভিযোগ হয়েছে। তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠানো হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’