ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

সোনারগাঁয়ে যৌতুক না পেয়ে গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম
স্মৃতি রানী বর্মণ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে স্মৃতি রানী বর্মণ (২৫) নামে এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়াপাড়া গ্রামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর অভিযুক্ত স্বামী ও বাড়ির লোকজন স্মৃতি রানীর লাশ সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে পালিয়ে যায়। নিহত স্মৃতি রানী কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর দূর্গাপুর এলাকার যতীশ চন্দ্র বর্মণের মেয়ে।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই শ্যামু চন্দ্র বর্মণ বাদি হয়ে শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে চার জনকে আসামি করে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের বেনু চন্দ্র বর্মণের ছেলে সনজিৎ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে কুমিল্লার সদর থানার আদর্শ উত্তর দূর্গাপুর গ্রামের যতীশ চন্দ্র বর্মণের মেয়ে স্মৃতি রানীর বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে পায়েল রানী বর্মণ নামের সাত বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই স্মৃতি রানীর স্বামী সনজিৎ চন্দ্র বর্মণ, শ্বশুর বেনু চন্দ্র বর্মণ, শাশুড়ি জোসনা রানী বর্মণ ও খালাতো বোন স্বরসতি চন্দ্র বর্মণ যৌতুক দাবি করে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। তারা পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিল।

দাবিকৃত যৌতুকের তিন লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও বাকি দুই লাখ টাকার জন্য স্মৃতিকে নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্মৃতি রানীর ভাই শ্যামুকে ফোনে যৌতুকের বাকি দুই লাখ টাকা দ্রুত পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়। টাকা পরিশোধ না করলে স্মৃতিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

পরদিন শুক্রবার সকালে স্বামী সনজিৎ পুনরায় ওই টাকা দাবি করে এবং না দিলে সংসার না করার হুমকি দেয়। এরপর দুপুরে তারা জানতে পারেন, স্মৃতি রানী সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে স্মৃতির মরদেহ দেখতে পান। পরে তারা স্বামীর বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা ঝুলন্ত অবস্থায় পান।

মামলার বাদি, নিহতের ভাই শ্যামু চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘তার বোনকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোক যৌতুক না পেয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। তার গলায় শ্বাসরোধের স্পষ্ট দাগ দেখা গেছে। আমি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ তিনি আরও জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই স্মৃতির মৃত্যু হয়েছে, ডাক্তারেরাও এটি নিশ্চিত করেছেন। তবে শ্বশুরবাড়ির কেউ তখন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না; তারা লাশ রেখে পালিয়ে গেছে।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’