শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল চবি ছাত্র হৃদয়ের

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম

গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ হৃদয় চন্দ্র তারুয়া। ছবি- সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ হৃদয় চন্দ্র তারুয়া। ছবি- সংগৃহীত

চোখে ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন, কাঁধে ছিল পরিবার আর সমাজের ভার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে সেই তরুণই ছিলেন প্রতিবাদের অগ্রভাগে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তারুয়া গুলি খেয়ে শহিদ হন ২৩ জুলাই। তার কণ্ঠনালিতে বিদ্ধ হওয়া ঘাতক বুলেট শুধু তার জীবনটাই শেষ করেনি, থামিয়ে দিয়েছে দরিদ্র বাবা-মায়ের বিসিএস ক্যাডার ছেলেকে ঘিরে লালিত সব স্বপ্ন।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আন্দুয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি রতন চন্দ্র তারুয়া এবং মায়ের নাম অর্চনা রানী। তারা দুজনই জীবনের সকল কষ্ট সয়ে একমাত্র সন্তান হৃদয়কে মানুষ করছিলেন বিসিএস কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন নিয়ে।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে ষোলশহর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত উত্তাল পরিস্থিতিতে আন্দোলনে ছিলেন হৃদয়। বিকেল ৪টার দিকে পুলিশের সঙ্গে সরকারের সশস্ত্র ক্যাডারদের একযোগে চালানো গুলিতে তার গলায় গুলি লাগে। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ জুলাই ভোরে ঢাকা মেডিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার বাবা রতন তারুয়া বলেন, ‘১৮ জুলাই বিকেলে ওর বন্ধু জিমি ফোন করে জানায়, ‘আঙ্কেল, হৃদয়ের অ্যাক্সিডেন্ট হইছে। গায়ে রাবার বুলেট লাগছে।’ এই কথা শুনে জায়গায় বসে পড়ি। কোথাও কোনো গাড়ি নাই—না লঞ্চ চলে, না বাস। বড় বিপদে পড়ে যাই।’

পরে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসিইউ, এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তদবিরে ঢামেকে আইসিইউ ম্যানেজ করা হয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ২৩ জুলাই ভোরে আমার হৃদয় দুনিয়া ছাড়ে, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা।

হৃদয় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ইতিহাসে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল ১ম ও ২য় বর্ষে। লেখাপড়ার খরচ চালাত টিউশন করে। বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। রতন বলতেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশসহ যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত, তাদের বিচার চাই। হৃদয়ের রক্ত যেন অপচয় না হয়।’

শহিদ হৃদয়ের বাবা আরও বলেন, ‘‘আমরা একমাত্র সন্তান হারিয়েছি। যেন সরকারের কাছে হাত পাততে না হয়, সেজন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা চাই। জামায়াত আমাদের ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ দিয়েছে ৫ লাখ টাকা। সেই টাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে চায়ের দোকান দিছি।’’

তিনি জানান, বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় তার মেয়েকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ‘তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু আমি নিজ জেলায় দিতে অনুরোধ করেছি।’

মা অর্চনা রানী বলেন, ‘সবশেষ বাড়িতে এসে হৃদয় আমাকে বলেছিল, ‘মা, তোমারে তো আমি প্রাইমারিতে ভর্তি হইয়া থেইকাও মাইনষের বাসায় কাম করতে দেখি। খুব খারাপ লাগে।’ আমি বলেছিলাম, ‘বাবা এখন তো ভালো টাকা পাই। চাকরি পেতে টাকা লাগে, তাই জমানোর চিন্তা করি।’ ও বলেছিল, ‘মা, ওসব আর কইও না। আমি বিসিএস দিমু, মাস্টার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরি করমু। তোমারে কাম করতে হইবো না।’

তিনি বলেন, ‘ওর প্রতিটা পরীক্ষায় রোল এক ছিল। ক্লাস এইটে ওঠার সময় একটা গাইড কেনার জন্য আমি মাসখানেক অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৭০০ টাকা দেই। আমার হাতের নখও ও কাটত। এখন আর কেউ আমাকে ‘মা’ বলে না। আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই। আমাদের গ্রামে জায়গা আছে, কিন্তু ঘর নাই। সরকার যদি একটা ঘর করে দিত, তাহলে এই বয়সে অন্যের ভাড়াঘরে থাকতে হতো না। চারপাশে শুধু অন্ধকার দেখি এখন।’

এখনো ছেলের শার্ট-প্যান্ট বুকে চেপে কান্নায় ভেসে যান তিনি। ‘আমার ছেলে ফোনে বলত, ‘মা, ওষুধ খাইছ? ঘুমাইও টাইমে।’ এখন আর কেউ এমন করে বলে না। আমার বুক খালি করে যারা গেছে, তাদের বিচার চাই।’ 

২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। 

তথ্যসূত্র: বাসস

Shera Lather
Link copied!