ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর হানাদার মুক্ত দিবস

পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:২১ পিএম
ছবি- বাসস

আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর। পিরোজপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পিরোজপুর পাক হানাদারমুক্ত হয়। এই দিনে ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। পিরোজপুরের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত মেজর জিয়াউদ্দিনের আওতায়।

১৯৭১ সালের ৪ মে পিরোজপুরে প্রথম পাক বাহিনী প্রবেশ করে। শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌবন্দর থেকে পাক বাহিনী প্রবেশের পথে প্রথমেই তারা মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। তারপর ৮টি মাস স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষকে।

১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মহকুমা শহরের কালো পিচঢালা পথে এক অকুতোভয় নারী মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ভাগীরথী সাহা। দু’জন সিপাহী রশি দিয়ে ভাগীরথীর দু’হাত বেঁধে রশির অপর প্রান্ত একটি মোটরসাইকেলের সাথে বেঁধে হানাদার সুবেদার সেলিম শহরের পিচঢালা সড়কে প্রায় দুই কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে ভাগীরথীর প্রাণহীন নিথর দেহ বলেশ্বর নদে নিক্ষেপ করে। অবশেষে তার শরীরের ছোপছোপ রক্ত সেদিন একে দিয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা।

পিরোজপুরকে হানাদারমুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টায় পিরোজপুরের দক্ষিণ প্রান্ত পাড়েরহাট বন্দর দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিবাহিনীর এ আগমনের খবর পেয়ে পাক হায়নারা শহরের পূর্বদিকে কচানদী দিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। এর আগে স্বরূপকাঠী পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দুর্গে পাক বাহিনী আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বহু পাকসেনা নিহত হয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাক বাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা পিরোজপুর অঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে। সম্ভ্রম লুটে নেয় প্রায় ৫ হাজার মা–বোনের।

পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহরের স্বাধীনতা চত্বর থেকে সকালে আনন্দ শোভাযাত্রা এবং শেষে বলেশ্বর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ।