ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

রাজশাহীতে সম্মেলন ঘিরে চাঙা বিএনপি, পদ পেতে মরিয়া নেতাকর্মীরা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে দলটি চাঙা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আগামী ১০ আগস্ট রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে দলটির রাজনীতিতে চাঙা ভাব বিরাজ করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী।

এই সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী নগরীতে নতুন নেতৃত্ব পাবে বিএনপি। তাই এই নেতৃত্বে আসতে পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। চালাচ্ছেন জোর লবিং। দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় নেতৃত্বের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছিল নেতাকর্মীরা। সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবার কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে পুরোনোদের আধিপত্য কমতে যাচ্ছে। গতানুগতিক ধারার নেতৃত্ব থেকে এবার বের হতে চায় দলীয় নেতারা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজশাহী বিএনপির দুর্জয় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। 

১৫ বছর আওয়ামী সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছিলেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। পুলিশি হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে পড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এবার মহানগর বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির কার্যক্রমে গতি ফিরছে। এ জন্য মহানগর কমিটিকে ঢেলে সাজাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি নজর রাখছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের একঘেয়ে নেতৃত্বে থাকা সিনিয়রদের বিরতি টানবে এবং নতুন প্রাণশক্তি জোগাতে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে বলে জানান একাধিক নেতৃবৃন্দ। এর ফলে মহানগর বিএনপিতে নতুন মেরুকরণও ঘটতে পারে বলেও ধারণা করছে নেতাকর্মীরা। ফলে এই কমিটিতে নিজেদের অবস্থান সক্রিয় করতে কেন্দ্রীয় লবিং থেকে শুরু করে মরিয়া হয়ে পড়েছেন অনেকে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুটি উপায়ে নেতা নির্বাচন করতে চাই। একটা হচ্ছে সম্ভব হলে আলোচনার ভিত্তিতে একটা প্যানেল তৈরি করা। সেটা যদি না হয়, তা হলে গোপন ব্যালটে নেতা নির্বাচন করা হবে।’

এদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলন-সংক্রান্ত সার্বিক প্রস্তুতির জন্য দলের দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও ওবায়দুর রহমান চন্দন। ইতোমধ্যে এই দুই নেতাকে এ বিষয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক আমিরুল ইসলাম আলীম বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে এরই মধ্যে আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। আর নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সততা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এবারের কমিটিতে রাজশাহীবাসীর জন্য চমক থাকবে। তবে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের তারুণ্য নিয়েই কমিটি গঠন হবে বলে আশা করছি।’

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, ‘যারা বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে কাজ করেছেন, মামলা খেয়েছেন, জেলে গেছেন, রাজপথে ছিলেন এবং সৎ ও যোগ্য তারাই নেতৃত্বে আসবেন।’

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে এরশাদ আলী ইশাকে আহ্বায়ক ও মামুন অর রশিদ মামুনকে সদস্য সচিব করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তার আগে দীর্ঘদিন মিজানুর রহমান মিনু সভাপতি ও শফিকুল হক মিলন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং শফিকুল হক মিলন কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক। 

আসন্ন সম্মেলন ঘিরে রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক তৎপরতা। দীর্ঘদিন পর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে, সম্মেলন উপলক্ষে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এরই মধ্যে ঢাকায় দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘নয়াপল্টনের ওই বৈঠকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিসহ নগরীর সাতটি থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তাদের নিয়েই মূলত সম্মেলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। তবে অবশ্যই সৎ, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত—এমন নেতৃত্ব আসবে বলে আশা করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ‘আসন্ন সম্মেলন ঘিরে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। নেতাকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’