সিলেটের বহুল আলোচিত সাদাপাথর লুটকাণ্ডে জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পর অবশেষে দৃশ্যমান হচ্ছে পরিবর্তন। জেলা প্রশাসকের জারি করা আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩৫ ট্রাক পাথর ফেরত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে প্রশাসনের অভিযান ও উদ্ধার কার্যক্রমে এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গত শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়: আগামী মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যার কাছে সাদা পাথর রয়েছে, তাকে তা নিজ খরচে ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে পাথর জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকযোগে পাথর ফেরত পাঠাতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ফেরত দেওয়া পাথর সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকাতে জমা রাখা হচ্ছে।
সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খুশনূর রুবাইয়াত জানিয়েছেন, ‘আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বমোট প্রায় ২৩৫টি ট্রাক পাথর ফেরত এসেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আরও পাথর ফেরত দেওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’
ব্যবসায়ীরা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে চলমান অভিযানে বিভিন্ন স্থানে মজুদ থাকা পাথরও জব্দ করা হচ্ছে। সদর উপজেলার ধোপাগুল, লালবাগ ও আশপাশের এলাকা থেকে একাধিক স্টোন ক্রাশার মেশিনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে।
সদর ইউএনও আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাথর ফেরত দিচ্ছেন। তবে ট্রাক সংকট ও পরিবহণের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকে একসঙ্গে সব পাথর ফেরত দিতে পারছেন না। বিষয়টি আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
ধোপাগুল এলাকার স্টোন ক্রাশার ব্যবসায়ী কাজী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে পাথর কিনেছিলাম। এরপর আর কোনো পাথর নেই। তারপরও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমার মিলে থাকা সব পাথর ফেরত দিয়েছি।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র ও সংলগ্ন রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট সাদা পাথর লুট হয়। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ এবং কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারকে প্রত্যাহার করে সরকার।
নতুন প্রশাসনের অধীনে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। ২২ আগস্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৫ লাখ ঘনফুট পাথর। এরপর দুই দিনে ফেরত দেওয়া ও জব্দ হওয়া পাথর মিলিয়ে মোট উদ্ধার এখন প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট।
সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, গণবিজ্ঞপ্তি এবং চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৫১টি ট্রাকে তল্লাশি চালানো হয়, যার মধ্যে ৭টি ব্যতীত সবকটিতে বৈধ এলসি ছিল। জেলা প্রশাসনের একাধিক দল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে অভিযান।
সাদাপাথর লুটকাণ্ডে প্রশাসনের কড়া অবস্থান ও ব্যবসায়ীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ফেরত আসতে শুরু করেছে লুট হওয়া সম্পদ। তবে দেড় কোটি ঘনফুট পাথরের বিপরীতে ৮ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট উদ্ধার এখনও অপ্রতুল। সময়সীমা শেষ হলে ফেরত না দেওয়া পাথর উদ্ধারে আরও কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।