একা একা কবরস্থানে যেতে ভয় পান না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এমন একজন মানুষ আছেন, যিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কবরের পাশে—খুঁড়েছেন দুই হাজারেরও বেশি কবর। তিনি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পূর্ব নূঠুর চর গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সি খালেক মিয়া।
প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কবর খোঁড়া ও গোরস্থান পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে আসছেন তিনি। পারিশ্রমিক বা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়— নিজের আগ্রহ, ধর্মীয় দায়িত্ববোধ ও মানবিক অনুভূতি থেকেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন খালেক।
স্থানীয়দের ভাষা মতে, এলাকায় কেউ মারা গেলে খালেকই প্রথমে খবর পান এবং দাফনের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। কোথায় কবর হবে, কীভাবে খোঁড়া হবে— সবকিছুর দায়িত্ব তিনিই নেন নিঃস্বার্থভাবে।
খালেক বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে আমি এই কাজ করছি। যতদিন আল্লাহ আমাকে শক্তি দিবেন, ততদিন এভাবেই মানুষের সেবা করে যেতে চাই। এটা আমার কাছে দায়িত্ব, আবার ইবাদতেরও মতো।’
অলৌকিক কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘তেমন কিছু না। মাঝে মাঝে পুরোনো হাড়, মাথার খুলি বা কাফনের কাপড় বের হয়। শুরুতে ভয় লাগত, এখন আর লাগে না— সবই অভ্যাস হয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, গোরস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে কখনো সাপ বা শিয়ালের মুখোমুখি হতে হয়, তবে তাতেও ভয় পান না। বর্তমানে গোপালপুরের নূঠুর চর ও ঘাটাইল থানার নরজনা গ্রামের কয়েকটি গোরস্থানের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে খালেকের একটাই কামনা— মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন এই সেবামূলক কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন