সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেকসই সাংবাদিকতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (SACMID) যৌথভাবে একটি কর্মশালা ও সংলাপের আয়োজন করেছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টায় রাবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ১২৩ নম্বর কক্ষে ৩ ঘন্টাব্যাপী কর্মশালাটি আয়োজিত হয়।
ডয়েচে ভেলে একাডেমির সহযোগিতায় SACMID এর ‘জার্নালিজম অফ দ্যা ফিউচার’ প্রজেক্টের আওতায় ‘Sustainable Journalism Journey Towards the Future’ শীর্ষক এই কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি দিকনির্দেশনা প্রদান করেন SACMID এর উপ-পরিচালক সৈয়দ কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে গণমাধ্যমের চাহিদা, পরিসর ও ব্যবহারকারী বাড়ছে। ফলে, দরকার হয়ে পড়েছে নতুন নতুন জ্ঞান, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। সরকারের একার পক্ষে সকলকে এই জ্ঞান, প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব না। এজন্য কিছু বেসরকারি সংগঠন সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করছি। এতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সাংবাদিকগণ হয়ে উঠবেন আরও দক্ষ ও যোগ্যভাবে।
এ সময় আরও দিকনির্দেশনা দেন কর্মশালার সমন্বয়কারী ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোমা দেব। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আমরা ফিল্ড ওয়ার্কভিত্তিক পড়াশোনার দিকে গিয়েছি।
কর্মজীবনে জড়তা ভেঙে দেওয়ার জন্য প্র্যাকটিক্যালি বিভিন্ন কাজ করছে তারা। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে অনবদ্য সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক যেকোনো সংকট, উত্তরণের উপায় ও তাদের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের সাথে পরামর্শের আহ্বান জানান।
বর্তমান সময়ের মিডিয়ার সমালোচনা করে সমাপনী বক্তব্যে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল (সাজ্জাদ বকুল) বলেন, চলমান সময়ের জার্নালিজমের সংকটকে সংলাপের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। এরপর তা সমাধান করলে জার্নালিজমে পরিবর্তন করা সম্ভব। তাঁর দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. বকুল বলেন, সাংবাদিকতার মূল পরিবর্তন ঘটেছে প্রযুক্তিগত ও মালিকানার জায়গায়। মালিকানার সংকটকে সাংবাদিকতার সংকটে পরিণত করেছে। একটা মিডিয়ার কোয়ালিটি মালিক না হলে কোয়ালিটি জার্নালিজম সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, দেশের গণমাধ্যমের মালিকানা নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা হওয়া উচিত। মালিকপক্ষের সদিচ্ছা ছাড়া সংবাদকর্মীদের জন্য ওয়েজবোর্ড মেইনটেইন যেমন কঠিন, গুণগত সাংবাদিকতা তো আরো কঠিন। এ সংকট কাটিয়ে তুলতে মিডিয়ার একাডেমিক অঙ্গনের বুদ্ধিজীবী, মিডিয়াকর্মী, বর্তমান শিক্ষার্থী ও মালিকপক্ষসহ সকলকে কাজ করে যেতে হবে।
রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের অত্যাধুনিক সাংবাদিকতা বিভাগ হওয়ার প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় বিভাগে ইতিমধ্যেই একটি রেডিও স্টেশন নির্মিত হয়েছে যা শিগগিরই উদ্বোধন করা যাবে। চলচ্চিত্র সম্পাদনার জন্যও একটি দুটি এডিটিং সেটআপ স্থাপিত হয়েছে। আর বর্তমানে বিভাগের মিডিয়া ল্যাবে একটি অনলাইন টিভি স্টুডিও নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে যা আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা যায়। বিভাগের প্র্যাকটিসিং সংবাদপত্র `অনুধ্যান` আবারো চালুর জন্য শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সে আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিভাগের মিডিয়া ল্যাবকে একদম নতুনরূপে সাজানো হচ্ছে। আগামী জুন মাসের ভেতরেই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরির পূর্ণ ব্যাবহার করতে পারবে। দেশের কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগে এমন সুযোগ-সুবিধা আর আছে বলে তাঁর জানা নেই। এ ল্যাবের ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা আরও দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠবে যা সাসটেইনেবল জার্নালিজমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কর্মশালার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোমা দেবের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক মশিহুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ। এতে বিভাগের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :