রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিসকক্ষে ভয়াবহ আগুনে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণ মনে হলেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণিত হয়েছে।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা ২০ মিনিটে বিয়াম ভবনের ৫০৪ নম্বর কক্ষে আগুন লাগে। এতে অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর দগ্ধ হয়ে পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। অগ্নিকাণ্ডে অফিসের এসিসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, দলিল, ব্যাংক হিসাব, চেক বই ও চুক্তিপত্র সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়।
পিবিআই-এর ‘স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট’ (এসআইঅ্যান্ডও) তিন মাস তদন্ত শেষে নিশ্চিত হয়, নথিপত্র ধ্বংস করতে গিয়েই দুর্ঘটনাবশত এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগানোর পেছনে চুক্তি ছিল ১০-১২ লাখ টাকার।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুইজন আসামিকে শনাক্ত করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৬)। ২৫ জুলাই কুড়িগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই-এর বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান জানান, তদন্তে উঠে এসেছে, এসএম জাহিদুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ধ্বংসে আশরাফুলসহ অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুককে নিয়ে পরিকল্পনা করেন। আশরাফুলকে ১০-১২ লাখ টাকায় রাজি করানো হয়।
ঘটনার দিন আশরাফুল সিসিটিভি বন্ধ করে দেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্ষে ঢুকে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়। আগুন লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে এবং দুইজন নিহত হন।
বিস্ফোরণের পর জাহিদের সহায়তায় আশরাফুল আত্মগোপনে চলে যান। তবে পিবিআই-এর প্রযুক্তি সহায়তায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটকের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুই আসামি।
ঘটনার পর বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর ৬ মে পিবিআই মামলার দায়িত্ব নেয়।
পিবিআই জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহার করে তারা জটিল মামলার রহস্য উদঘাটনে আগামীতেও কাজ চালিয়ে যাবে। বিয়ামের ভয়াবহ এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :