ঢাকা রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

অনলাইনে প্রতারণা করে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ১০:১০ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

 

বাচ্চা না হওয়া সংক্রান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে সব কিছু হায়েছেন নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা আফরোজা বেগম।

পুলিশ জানায়,  এ চক্রটি কাজ হচ্ছে সোনা লুটপাট করা।  আফরোজা বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে চক্রটি তাকে জানান ঘরের মধ্যে সোনা রাখলে সন্তান হবে না।  এরপর বিভিন্ন প্রলোভনে তার কাছ থেকে চক্রটি কৌশলে হাতিয়ে নেয় ১৫ ভরি সোনা ও ১০ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সরঞ্জাম।

মোহাম্মদপুরের বছিলা ও সাভার থেকে অনলাইনে অভিনব কৌশলে এমন প্রতারণা করা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে ৮৫ ভরি সোনা এবং তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।  এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে এসব বিষয়ে সর্তক থাকার আহবান জানানো হয়।

শনিবার (১৭ মে) সকালে ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) তারিক লতিফ এসব তথ্য জানান।

পুলিশ জানায়, এই চক্রের খপ্পরে পড়ে ১৫ ভরি সোনা ও ১০ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল খুইয়ে এক ভুক্তভোগীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকালে শুক্রবার ৮৫ ভরি সোনা উদ্ধারসহ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিউমার্কেট জোনের এসি তারিক লতিফ বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় বসবাসকারী আফরোজা বেগম নামের একজন নারী ফেসবুকে ‘বাচ্চা না হওয়া সংক্রান্ত’ একটি বিজ্ঞাপন দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে প্রতারকরা ভিকটিমকে জানায়, তার ঘরে বা ব্যবহৃত কোনো সোনা থাকলে বাচ্চা হবে না। সেই কথা বিশ্বাস করে ভিকটিম প্রতারকদের কাছে তার ব্যবহৃত ১৫ ভরি সোনা ও ১০ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সরঞ্জাম এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সোনা ও মালামাল হাতে পেয়েই প্রতারকরা ওই নারীকে ব্লক করে দেয়।

পুলিশের তথ্য মতে, এ ঘটনায় আফরোজা বেগম বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গত শুক্রবার নিউমার্কেট থানার এসআই ফিরোজ আহম্মেদ ও তার সঙ্গীয় ফোর্স সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে সেখান থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মাদপুর থানাধীন বছিলা এলাকার ৪০ ফিট থেকে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  এসময় আসামিদের বাসা থেকে ৮৫ ভরি সোনা, তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কশিনার (ডিসি) মাসুদ আলম ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সাংবাদ সম্মেলনে জানান, নিউমার্কেট থানা এলাকার বাসিন্দা আফরোজা  গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করার সময় ‘দোয়া কবুলের অলৌকিক গল্প’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ দেখতে পান।  সেই গ্রুপে একটি পোস্টে ‘তদবীর রুকাইয়া’ লেখা দেখতে পেয়ে তিনি পোস্টদাতার মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন।  ওই আইডি ব্যবহারকারী অজ্ঞাতনামা মহিলা তাকে জানায়, সে তাকিয়ার মাধ্যমে অনেক কাজ হাসিল করেন। পরবর্তীতে ওই নারী তাকে Tahqiya নামক ফেসবুক আইডির লিংক দিয়ে আইডির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।  ভুক্তভোগী আফরোজা তার কথামতো ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে আইডি ব্যবহারকারী তাকে জানায়, তিনি সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এক পর্যায়ে আফরোজা হোসেন তার বাচ্চা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার কথামতো কাজ করতে বলেন।  এরপর ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি সেই অজ্ঞাতনামা মহিলা মেসেঞ্জারে একটি নাম্বার দিয়ে সে নাম্বারে ছয় হাজার একশত টাকা বিকাশ করতে বলেন।  তিনি তার কথামত সরল বিশ্বাসে ওই নাম্বারে টাকা প্রেরণ করেন।

ডিসি মাসুদ জানান, পরে ১৯ জানুয়ারি আফরোজা ব্যবহৃত জামা কাপড়, শ্যাম্পু, সাবান, তেল ও স্বর্ণের গহনা কুরিয়ার করে তার কাছে পাঠিয়ে দিতে বলে এবং জানায় সব কিছু ঝাড়ফুঁক দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফেরত দেওয়া হবে এবং সেগুলো ব্যবহার করলে তার বাচ্চা হবে ও সব সমস্যা কেটে যাবে।  আফরোজা হোসেন তার কথামতো তার ব্যবহৃত ২৫ ভরি স্বর্ণ ও ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী এস এ পরিবহনের মাধ্যমে প্রেরণ করেন।  অতঃপর সেই স্বর্ণ ও মালামাল নিয়ে তাকে ম্যাসেঞ্জার হতে ব্লক করে দেয়।  পরে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে আফরোজা হোসেন বাদী হয়ে ডিএমপির নিউমার্কেট থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার পরে পুলিশ।

তিনি বলেন, নগরবাসীকে এমন প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে।  লোভে পড়ে ফেসবুকে পরিচয় হয়ে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না।

গ্রেপ্তার ৩ আসামি ও উদ্ধার মালামালের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট জোনের পুলিশ কর্মকর্তা তারিক লতিফ।  এছাড়া চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।