বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলে বাজারগুলোতে। কখনো অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, আবার কখনো বাজার থেকে পণ্য উধাও। এভাবেই সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের পকেট কাটে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বছরের শুরু থেকেই ভোজ্যতেল নিয়ে এক ধরনের অসহনীয় তেলবাজি চলছে।
বোতলজাত তেল কিছুদিন পর পর উধাও হয়ে যায়। যদিও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে; তারপরও চাহিদা অনুসারে সরবরাহ পুরোপুরি ঠিক হয়নি। তবে স্বস্তির খবর, চলতি বছরের শুরু থেকেই নিম্নমুখী নিত্যপণ্যের বাজার।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, রামপুরা বাজার ও কাপ্তান বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রোজার শুরুর সময় কেনাকাটার বাড়তি চাপ থাকে। তবে এবার এ সময় নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম মোটামুটি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই থাকে। যদিও কিছু কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। তবে চাহিদা কিছুটা কমায় দামও কমেছে।
গত বছরও বাজারে সবজির মৌসুমে দাম ছিল খুবই চড়া। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। অথচ চলতি বছর সবজির বাজার একেবারে ঠাণ্ডা। দাম একেবারে নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারাও সবজি কিনছেন একেবারে থলে ভরে।
মৌসুম ছাড়াই কম দামে সবজি কিনতে পারায় ক্রেতারাও বেশ খুশি। পাশাপাশি রমজানের শুরু থেকে বাজারে বেগুনের দাম সেঞ্চুরি হাঁকালেও বর্তমানে তা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়, প্রতি কেজি খিরা ৪৫ টাকা, প্রতি কেজি শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ৫০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪৫ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, বাঁধা কপি প্রতি পিস ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, লেবু মানভেদে প্রতি হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া আলু ও পেঁয়াজের দাম আগে থেকেই কম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে আলু ও পেঁয়াজের মৌসুম থাকায় সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এ কারণে দাম কম। বাজার করতে আসা আবুল হাসান বলেন, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম। কারণ, শীতের সবজিগুলো বাজারে এখনো রয়েছে। তবে চাল, তেল অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। আশা করি, সরকার এই বিষয়টার সমাধান করবে তাড়াতাড়ি।
এদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। এক কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০-২১০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের মুরগির ডিম এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। গরু ও খাসির মাংসের দাম কমেনি, বরং বড়েছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে অস্থির রয়েছে মাছের বাজার। বর্তমানে প্রতি কেজি চাষের রুই (দুই কেজি আকারের) ৩৫০-৩৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২২০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা ও চিংড়ি ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১২০০ টাকায়।
এখনো চালের বাজারে অস্বস্তি রয়ে গেছে। সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। ২৮ জাতের চাল ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, অন্যান্য রমজানের তুলনায় এখনো আমাদের সবজির বাজার নাগালের মধ্যে রয়েছে।
দুই-তিন ধরনের সবজি ছাড়া বাকি সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে। তবে বেশি দামের যে কয়েকটি সবজি রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন- এগুলোর এখন মৌসুম নয় বলেই বাজারে সরবরাহ খুবই কম, তাই দাম বাড়তি।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম মীর বলেন, সত্যি কথা বলতে বর্তমানে দাম কম যাচ্ছে, গত শীতকাল থেকেই মূলত সবজির দাম কম যাচ্ছে।
বাজারে অন্যান্য কিছু পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সবজির দাম তুলনামূলক কম। বলতে গেলে সাধারণদের নাগালের মধ্যে রয়েছে সবজির দাম।
তবে ঢেঁড়স, পটোল, করলা- এমন কয়েকটি সবজির মৌসুম এখন না হওয়ায় সেগুলোর দাম বাজারে বাড়তি। এ ছাড়া বেগুনের দামও তুলনামূলক বেশি বাজারে। রমজানের শুরুতে বেগুনের দাম বেড়েছিল, সেই থেকে কিছুটা কমলেও এখনো ৮০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আহাদ আলী বলেন, অন্যান্য রমজানের সময়ের তুলনায় এ বছর রমজানে সব সবজির দামই তুলনামূলক কম যাচ্ছে। বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
তবে ঢেঁড়স, করলা, পটোলের দাম তুলনামূলক বেশি। কারণ, এগুলো এই সময়ের সবজি নয়, মূলত মৌসুম না হওয়ায় এগুলোর দাম বাড়তি।
অন্যদিকে রমজানের শুরুতে বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও, বর্তমানে তা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চিকন লম্বা বেগুনগুলো ৬০ টাকা কেজিও পাওয়া যাচ্ছে।

 
                            -20250314182404.webp) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন